ষ্টাফ রিপোর্টার :
নারায়ণগঞ্জে দল গুছানো বাদ দিয়ে কাঁদা ছোড়াছুঁড়িতে ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ব্যস্ত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন। অন্যদিকে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে এখন দল থেকে পদচ্যুত হওয়ার আতংকে ভুগছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা। কারন যেকোন সময় হতে পারে জেলা ও মহানগর কমিটির বিলুপ্তি। হতেও পারে শাস্তির সম্মুখীন।
গত ৫ আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে গর্তে থাকা জাতীয়তাবাদী বিএনপি দল ও অঙ্গ সংগঠনগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। শুরু হয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা,ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও চাঁদাবাজি। একই সাথে আধিপত্য নিয়েও শুরু হয় নিজেদের দলের অন্য নেতাদের বাড়িঘরেও হামলা সহ ভাংচুর। এনিয়ে কেন্দ্রে জমা পড়েছে অভিযোগের বিশাল পাহাড়।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সদর থেকে শুরু করে, ফতুল্লা, সিদ্বিরগঞ্জ, সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও বন্দরে আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে একাধিকবার হয়েছে সংঘর্ষ বিএনপির দুই গ্রুপে। জানা গেছে, যেকোন সময় জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করে দেয়া হতে পারে। এছাড়াও বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত নেতাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা।
ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের ছাত্রদলের সকল ইউনিট কমিটি বিলুপ্ত করেছে কেন্দ্র ছাগলচুরি থেকে শুরু করে বিএনপির মূল দলের নেতাদের ওপর হামলা ও দলীয় কার্যালয় ভাংচুরের অভিযোগে ।
এদিকে ৫ আগষ্টের পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় অবস্থিত শিল্পাঞ্চল বিসিক, সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেড, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল গুলোতে কিছু অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। ব্যাবসায়ীরা এসকল ব্যাপারে দলের হাই কমান্ডের সহায়তা চেয়ে করেছে অভিযোগ।
সর্বশেষ গত ২১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনানে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংকরোডে চলা বন্ধন পরিবহন দখল নিয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহাবুব উল্লাহ তপন এবং জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কারাবন্দি জাকির খান বাহিনীর মধ্যে আগ্নোয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কয়েক দফায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় দুপক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হলে তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর ফতুল্লার রেললাইন বটতলা এলাকায় ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু ও সাধারণ সম্পাদক এড. বারী ভূঁইয়ার অনুসারীদের মধ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জাকির হোসেন রবিনসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একে অপরের প্রতি অভিযোগ তুলেন রিয়াদ চৌধুরীর অনুসারীদের সাথে বারী ভূঁইয়ার অনুসারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।
১০ সেপ্টেম্বর সিদ্বিরগঞ্জের নাসিকের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কদমতলী পুল এলাকায় চাঁদাবাজি ও দখলবাজি ঘিরে সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলীতে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ৭ জন আহত হয়।
বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকার নূর হোসেন নামের এক বিএনপি কর্মী সম্প্রতি অভিযোগ তুলেছিলেন মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার কথা বলে সুজন নামের একজন কথিত যুবদল নেতা মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নামে ৩ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল। তার দেওয়ার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে উঠে। টাকা না দেওয়াতে নূর হোসেনকে গত কয়েকদিন ধরে কয়েক দফা মারধর করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৬ সেপ্টেম্বর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর উপর হামলার ঘটনা ঘটে।
এদিকে ৬ সেপ্টেম্বর রূপগঞ্জে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের অনুসারী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আলী আহমেদ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দীপুর অনুসারী উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব বাবুল মিয়ার মধ্যে দলীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পোষ্টার ছিঁড়ে ফেলাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষ লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া-পাল্টায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের লোকজন অপর পক্ষের বাড়িঘরে ও গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
১৯ আগস্ট রাতে সোনারগাঁ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারল ইসলাম মান্নান অনুসারীদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিনটি বাড়ি, দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। হামলায় নারীসহ ১২জন আহত ও হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
১৩ই আগষ্ট আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আড়াইহাজারে কালীবাড়ি এলাকায় শান্তি শোভাযাত্রায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমনের অনুসারীদের মধ্যে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ এর ঘটনা ঘটে।
চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের তকমা থেকে নিজেদের বাঁচাতে মরিয়া বিএনপি। কেন্দ্র থেকে আসছে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা ও নির্দেশনা। আবার সাম্প্রতিক সময়ে জেলার শীর্ষ বিএনপি নেতাদের সাথে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভার্চুয়াল বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নিজের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে দেন তারেক রহমান। এসকল ঘটনায় জড়িতদের কোন ক্রমেই বরদাস্ত করা হবে না এবং উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও জানান তিনি।
একদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভার্চুয়াল সকল অপরাধ ও অনৈতিক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার জন্য বারবার নির্দেশ করা হলেও নিজেদের আখের গুছাতে ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কখনো নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি গিয়াস উদ্দিন কড়া হুশিয়ারী দিয়ে চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সকল সংঘর্ষ বন্ধ করতে বলছে। তার বক্তব্য হাস্যকর বানিয়ে বহিষ্কার করা নেতারা আবার দিচ্ছেন বক্তব্য।একই সাথে সোনারগাঁ উপজেলার সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান ও সাবেক জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রেজাউল করিম একে অপরকে দোষছেন মামলায় নিজ দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগনের নাম দেওয়াকে কেন্দ্র করে। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিবের উপর হামলার ঘটনা নিয়ে মহানগর একাধিক বিএনপির নেতাকর্মীরা মহানগর এর সাবেক সভাপতি আবুল কালাম, তার পুত্র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাউছার আশা ও সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান মুকুলকে দোষছেন। অন্যদিকে তারাও চাঁদাবাজি করার ঘটনায় টিপুর উপর হামলা করেছে সাধারণ মানুষ বলছেন তারা।একই সাথে রূপগঞ্জে কাজী মনিরুজ্জামান মনির ও মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ও আড়াইহাজারে মাসুদুর রহমান সুমন ও নজরুল ইসলাম আজাদও একে অপরকে বিভিন্নভাবে দোষারোপ করে যাচ্ছে বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে।
চলমান দেশের এই অবস্থায় বিএনপির এধরনের কর্মকান্ডকে ভালো দৃষ্টিতেও দেখচ্ছে না রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা।তাদের মধ্যে দল গুছানো বাদ দিয়ে এভাবেই কাঁদা ছোড়াছুঁড়ি করতে থাকলে অধুর ভবিষ্যৎতে বিএনপির জন্য মোটেও ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যাবে না। এতে জনগনের থেকে আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষোভ ও জনপ্রিয়তা হারিয়েছে এই সুযোগে যদি বিএনপি কাজ করতে না পারে তাহলে যেকোন সময় বিএনপির অধঃপতন ঘটতে পারে বলেও মনে করেন তারা। তাই সময় থাকতে মানুষের কাছ থেকে বিশ্বাস ও আস্থা ফিরে পেতে কাঁদা ছোড়াছুঁড়ি বাদ দিয়ে এক সাথে মিলে কাজ করা উচিত। এতে দলের জন্যই মঙ্গল।