স্টাফ রিপোর্টার: সরবে আড়াইহাজার বিএনপি! নেতাকর্মী নিয়ে নতুন আঙ্গিককে দল গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কেন্দ্রীয় নেতাকর্মী থেকে ধরে স্থানীয় নেতাকর্মীরা। আধিপত্যবিস্তার নাকি দলের দুঃসময়ে নতুন মোড়কে সাজাতে চাচ্ছেন নেতাকর্মীরা এখনো অজানা নেতাদের। ইতিমধ্যে একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে আছেন আবার কেউ কেউ।তবে তাদের টার্গেট আসন্ন সংসদ নির্বাচনের টিকেট পেতে কিনা তা নিয়েও সন্দিহান অনেকেই।
ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর একেবারে যেন নতুন উদ্যমে বিএনপি মাঠে নেমে পড়েছে আড়াইহাজার বিএনপি দল নিয়ে। দল গোছানো ও আসন্ন সাংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজেদের কর্মীদের নিয়ে করছে একের পর ভারচুয়াল সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।বিতর্কিত অনেক কমিটিকেও করেছেন বিলুপ্তি একেই সাথে নেতাকর্মীদেরও করেছেন বহিষ্কার।
এদিকে নেতার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ক্ষমতা ও আধিপত্য নিয়ে নিজের দলের মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ঘরোয়া বিবাদ। নিজেরা নিজেরাই এখন প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। চলছে নিজেদের মধ্যে হামলা ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।এতে কেউ নিহত হচ্ছে, কেউ আহত কারো বা বাড়িঘর ভাংচুর ও আগুনে পোঁড়ছে।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারেও একই ঘটনা ঘটে চলেছে। আড়াইহাজারে বিএনপিকে গুছাতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে বিএনপির আলোচিত তিন নেতা। ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছে আড়াইহাজার বিএনপির আঙ্গুর, সুমন ও আজাদ। নিজেদের বাহিনী গুছিয়ে নিতেও ব্যস্ত তারা। এনিয়েও নিজেদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে সংঘর্ষ একের পর এক। ছাত্রদল থেকে শুরু করে স্বেচ্ছাসেবকদল, যুবদল, শ্রমিক দল ও মূল দল নিয়ে নিয়েও সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে বিবাদে দুই গ্রুপে ভাগ হওয়ায়।যার ফল স্বরূপ গত ১৩ই আগষ্ট পূর্বে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে একটি শান্তি শোভাযাত্রায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আড়াইহাজারে কালীবাড়ি এলাকায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমনের অনুসারীদের মধ্যে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ এর ঘটনা ঘটে। ইতিপূর্বেও রয়েছে এমন একাধিক সংঘর্ষ এর মত ঘটনা আড়াইহাজার বিএনপির নিজেদের মধ্যে।
আড়াইহাজার থানা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-২ আসন। এই আসনে বিএনপি আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা শুরু করেন আগাম জনসংযোগ। আড়াইহাজারে দলীয় অবস্থান এবং সমথর্কদের দিক দিয়ে বিএনপি বরাবরই শক্তিশালী। বদরুজ্জামান খান খসরু ছিলেন আড়াইহাজার বিএনপির কান্ডারি। কারন আড়াইহাজার বিএনপির নাম আসলে সর্বপ্রথম নাম আসে প্রতিষ্ঠাকালিন নেতা প্রয়াত জননেতা বদরুজ্জামান খসরু ও তার পরিবারের। বর্তমান আড়াইহাজার ত্রিকোণ আকারে নেতৃত্বের রাজনীতি চলছে। একই দলের তিনজনের নেতৃত্বে চলছে আড়াইহাজার। আতাউর রহমান আঙ্গুর, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন ও বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ।
আড়াইহাজার এলাকায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালিন নেতা প্রয়াত জননেতা বদরুজ্জামান খসরু পরবর্তীতে তার ছোট ভাই আতাউর রহমান আঙ্গুরকে নেতৃত্ব দিয়ে যান।তিনি বিএনপি থেকে একাধিকবার আড়াইহাজারের এমপি নির্বাচিত হন। তিনি নারায়ণগঞ্জ-২ আসন থেকে দুইবারের নির্বাচিত এমপি ও একাবারের পরাজিত এমপি ছিলেন।
বদরুজ্জামান খান খসরুর মৃত্যুর পর স্থানীয় বিএনপির হাল ধরেছেন তার ছেলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক যুবদল নেতা মাহমুদুর রহমান সুমন। নারায়নগঞ্জ ও কেন্দ্রীয় বিএনপির অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা খসরুর অনুপস্থিতিতে রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হয়েছেন তিনি। তার নেতৃত্বেও দল গুছানোর দায়িত্বটা স্বয়ং নিজেই নিয়েছেন।আড়াইহাজার বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে এতোদিন কিছুটা বিভক্ত থাকলেও এখন মিলিত হচ্ছেন মূলধারা চাচা-ভাতিজার বলয়ে।
অন্যদিকে চাচা-ভাতিজার পাশাপাশি আড়াইহাজার বিএনপির শক্ত হাতে হাল ধরেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। আর আজাদের হাত ধরেই আড়াইহাজার বিএনপি নতুন নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ১/১১ বিএনপির দুঃসময়ে থেকে এখন পর্যন্ত আড়াইহাজার বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশে ছাঁয়ার মতো পাশে আছেন আজাদ। দীর্ঘ এক যুগ পর আজাদের হাত ধরেই আড়াইহাজার উপজেলা ও পৌর এবং গোপালদী পৌর বিএনপির তিনটি নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দলীয় নেতাকমীর্রা জানান, ১৯৯১ সালে খসরু উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে আপন ছোট ভাই আতাউর রহমান আঙ্গুরকে বিএনপির মনোনয়ন এনে দেন। ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে আঙ্গুর সংসদ সদস্য নিবাির্চত হন। সংস্কারপন্থি হওয়ায় ২০০৮ সালের নিবার্চনে দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। তখন দলের মনোনয়ন পান খসরু। দলীয় বিরোধের কারণে ৮৭ হাজার ভোট পেয়েও আসনটি হাতছাড়া হয় বিএনপির। আসনটি চলে যায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুর হাতে। তখন থেকে আড়াইহাজার বিএনপিকে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়।
এছাড়া খসরু পরিবারের সদস্যদের সকলের জন্ম- মৃত্যু এই আড়াইহাজারেই। এখানেই তাদের নাড়ি পোতা। এই জনপদের প্রত্যেকটি গ্রামে গ্রামে খসরুর ভক্ত অনুরাগীরা রয়েছেন। তাই খসরুর মৃত্যুর পর বিএনপি অনেকটা নেতৃত্বশুন্য হয়ে পরেছিলো। কেনোনা আতাউর রহমান আঙ্গুর একাধিকবার এমপি নির্বাচিত হলেও বিএনপি ক্ষমতা হারানোর পর থেকে তিনি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। ফলে তার নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে বিগত নির্বাচনে দলের মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছিলেন নজরুল ইসলাম আজাদ। তবে বিগত নির্বাচনের পর থেকে দ্রুত পাল্টে যায় আড়াইহাজার বিএনপির চিত্র। গ্রামেগঞ্জে বিএনপির নেতা কর্মী সমর্থকরা খসরু পুত্র সুমনের দিকে ঝুঁকতে থাকেন। তিনিও নেতা কর্মীদের পাশে থেকে পিতার অভাব পূরণ করেন। তিনি গোটা আড়াইহাজারে বিএনপির সাংগঠনিক ভীত গড়ে তোলায় মনোনিবেশ করেন এবং এখনো সেটা চলমান রয়েছে। নেতা কর্মীরা জানিয়েছেন এই মুহুর্তে গোটা আড়াইশার উপজেলা বিএনপি রয়েছে মাহবুবুর রহমান সুমন নিয়ন্ত্রনে। সমনের নেতৃতে এখানে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। তার বাড়ি আড়াইহাজার হলেও সমগ্র নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন তিনি। তার রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি পাচ্ছে না বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ কোনো সংগঠনের ইউনিট কমিটিও। এর ফলে সর্বত্র আজাদ আতঙ্ক বিরাজ করছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের মনে।নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে নজরুল ইসলাম আজাদের পরিচয় ‘কমিটি মেকার’ হিসেবে। কমিটি গঠনের সময় হলেই নজরুল ইসলাম আজাদ পদ-পদবি কেনাবেচার দোকান খুলে বসেন। এ নিয়ে একাধিকবার আজাদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা, আজাদকে লাঞ্ছিতও করেছেন।