স্টাফ রিপোর্টার: প্রবীণ ও সিনিয়রদের অভ্যন্তরীণ একটি বলয়ের বাধার কারণে বিএনপির তরুণ নেতৃত্ব বিকশিত হতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির দলটির অসংখ্য নেতাকর্মী। শুধু তাই নয়, দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই-একজন নেতার সাথে আতাত করে পুরো জেলায় তৈরি করেছেন নিজস্ব বলয়। এমনকি দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মূল নেতৃত্বও সেই বলয়মুক্ত নয়।
বিষয়টি আমাদের প্রতিনিধির কাছে স্বীকার করে জেলার একাধিক নেতা জানান, এই সব বিষয় দলের সবাই জানেন।কিন্তু ভয়ে মুখ খুলছেন না।এমনকি খোদ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ওয়াকিবহাল।তবে দলের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে তিনি অনেক কিছু সহ্য করে যাচ্ছেন।
তারা বলছেন,আপনে খোঁজ নিয়ে দেখেন পুরো জেলায় এই বলয়টি নিজেদের লোককদের নেতৃত্ব দিতে বাধ্য করছে দলের হাইকমান্ডকে।বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির মূল নেতৃত্ব নিয়েও অনেকেই প্রশ্ন করুন, তারা সিংহ ভাগ কার লোক।তাহলে পরিষ্কার হয়ে যাবেন। তারা যোগ্য নেতৃত্ব চায় না বরং তারা ক্ষমতা চায়। তারা বলয় সৃষ্টি করে যোগ্য নেতৃত্বকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে নিজেদের লোকদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর জন্য। করছেন পকেট কমিটি। পদ বিক্রি হচ্ছে টাকায় অযোগ্য নেতৃত্বের কারনে যোগ্য নেতৃত্ব হারাচ্ছে বিএনপি।
মহানগর বিএনপি দলটির বিভিন্ন সূত্র থেকে জানান যায়, এই সিনিয়র বলয়িটি তারেক রহমান দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নিজেদের পছন্দ সহ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে বেশি মরিয়া হয়ে উঠেন। এই বলয়ের বিরুদ্ধে দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীতো দূরের কথা অনেক সিনিয়র নেতারাও কিছু বলতে ভয় পায়। এসব নেতার সঙ্গে নিজস্ব বলয়ের নেতাকর্মী ছাড়া নেই সাধারণ কোনো কর্মীর সম্পর্ক। গত মাসেও জেলার বিভিন্ন জনসভায়ও প্রকাশ্যে বেশ কিছু সিনিয়র নেতাদেরকে উদ্দেশ করে কর্মীদের সামনে অপমান করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলেও কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি।
প্রতিটি রাজনৈতিক দলই তরুণ ও সাবেক ছাত্রনেতাদের ভবিষ্যত নেতৃত্বের জন্য তৈরি করে থাকেন। তেমনি বিএনপিও তরুণ নেতৃত্বকে সামনে আনার চেষ্টা করলেও সিনিয়রদের একটি বলয়ের কারণে তাদের সামনে আনতে পারছেন না বলে অভিযোগ দলটির তরুণ নেতাদের। যাদের প্রতি সেই সিন্ডিকেটের সুনজর নেই তারা আসতে পারছেন না ফ্রন্ট লাইলে। আর ফ্রন্ট লাইনে আসলেও সেই সিনিয়ররা কোনোরকম সহযোগিতা করছেন না। কোণঠাসা করে রাখা হচ্ছে।
এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির এক সদস্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, , আপনেরা জানেন তরুন মানেই দলের শক্তি আর নতুন নেতৃত্ব। কিন্তু এখনো আমাদের কিছু সাবেক ও বর্তমান কমিটির মধ্যে সব সময় এক প্রকার দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে। তারপরও আমাদের মহানগরের বর্তমান কমিটিও দুইটি ভাগে বিভক্ত। একটি কেন্দ্রীয় কিছু নেতাদের বলয়ে চলে আরেকটি আমাদের এখানের সিনিয়র ও বর্তমান কয়েকজনের বলয়ে চলে। তবে কেন্দ্রীয় যেই নেতার বলয়ে দলটি চলছে তারা সব সময়ই প্রভাব খাটিয়ে চলে। এই বলয়টাই প্রতিটি বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের কমিটিতে প্রভাব খাটিয়ে কমিটি দিয়ে যাচ্ছে। এই বলয়টি থেকে যতদিন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ মহানগর আর জেলাই বলেন মুক্ত না করা হবে ততদিন আর তাদের আস্তাভাজন ছাড়া যার ফলে নতুন করে নেতৃত্বে আসা সম্ভব নয়।
জেলার দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে সংবাদ সংগ্রহের সময় আলাপকালে জানা যায়, সারাদেশের মানুষ আজ তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানের নেতৃত্বেকে সাধুবাদ জানিয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের তরুন অনেককে ভবিষ্যৎ বিএনপির জন্য তৈরী করছেন।সেখানে অনেককে দলের ভেতরেই প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। আমরা তরুনরা আমাদের প্রবীনদের পরামর্শে এবং সহযোগিতায় দলকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই। কিন্তু সে ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি না।তারেক রহমান সাহেব দলের বৃহত্তর স্বার্থপ আমাদের বলেছেন প্রবীনরা অলংকার। তাদের অসম্মান হয় এমন কিছু করা যাবে না।
তারা আরো জানান, দুঃখের সহিত বলতে হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর আমাদের অনেকের বাসায় হামলা হয়।মনে করেছিলা। আওয়ামী লীগের লোকেরা হামলা চালিয়েছে। কিন্তু পরে জানতে পারি, আমাদের দলের এক সিনিয়র নেতার ইন্ধনে আমাদের নাম না জানা অনেক নেতাকর্মীরাই আমাদের বাসায় হামলা চালিয়েছে। তাছাড়াও দেখতে পারছেন নেতৃত্বে আসতে না পেরে অনেক তরুন নেতারা চাঁদাবাজি, ঝুট সন্ত্রাসী সহ একাধিক অপরাধে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর তা পুরো জেলাবাসীই দেখেছে।এভাবে যদি চলতে থাকে বলয়ের মাধ্যমে কোন রাজনৈতিক দল তাহলে কখনো নতুন নেতৃত্বে আসা সম্ভব নয়। কেন্দ্রেরও উচিত যোগ্যদের যথা স্থানে দিয়ে অযোগ্যদের দল থেকে সরিয়ে ফেলা।
অবশ্য দলের মধ্যে কোন বলয় নেই বলে আবার অনেলেই দাবী করেছেন।তারা বলছেন, এখানে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক নিয়ম রয়েছে। যেকোন সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তন আসে।প্রবীনদের নেতৃত্বে তরুনরা এগিয়ে চলে।তাদের অভিজ্ঞতা এবং আদর্শ কাজে লাগান তরুনরা। প্রবীনরা বাঁধা দিচ্ছেন বা বলয় সৃষ্টি করছেন কথাটি সত্য নয়। প্রবীনরা বাঁধা সৃষ্টি করলে হয়তো আমরা রাজপথে নামতেই পারতাম না।