তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন
ভোটার উপস্থিতি আশানুরূপ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ রাখেনি আওয়ামী লীগ। বিএনপিবিহীন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির বিষয় মাথায় রেখে দলীয় প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখা হয়। কিন্তু প্রথম দুই ধাপে ভোটার উপস্থিতি আশানুরূপ না হওয়ায় একরকম অস্বস্তিতে পড়েছে ক্ষমতাসীনরা। এমন পরিস্থিতিতে আজ অনুষ্ঠেয় তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোটার যাতে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হন, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
এদিকে তৃতীয় নির্বাচনে দলীয় সংসদ-সদস্যদের প্রভাব বিস্তার ও নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা রোধ করতে আজও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন তারা। দলের কেউ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক যুগান্তরের কাছে দাবি করে বলেন, প্রথম দুই ধাপে ভোটার উপস্থিতি অনেক ভালো ছিল। আশা করছি তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে সেই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। ভোটাররা কেন্দ্রে যাবেন এবং নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
তিনি আরও বলেন, কৌশলগত কারণে এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়নি। প্রতীক না থাকায় নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হয়েছে। ফলে নির্বাচনটাও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে। মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। কাজেই নির্বাচনে দলের একাধিক প্রার্থী প্রতিযোগিতা করলেও দলের অভ্যন্তরে বিভেদ-বিভাজন সৃষ্টির সুযোগ নেই। তবুও নির্বাচনে কেউ যেন বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে না পড়েন-সে বিষয়গুলো দলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, তৃতীয় ধাপের নির্বাচনও অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে। প্রথম দুই ধাপের চেয়ে ভোটার উপস্থিতও বৃদ্ধি পাবে। সাধারণ ভোটাররা স্বাধীনভাবে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেবেন। এছাড়া কিভাবে ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধি করা যায় তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে দলের কেউ যদি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেন এবং নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করেন। অবশ্যই তাকে সাংগঠনিক শাস্তির আওতায় নিয়ে আশা হবে।
৮ মে প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণের মধ্যদিয়ে শুরু হয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রথম ধাপের নির্বাচনের ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল, ফলাফল ঘোষণাসহ নানা অনিয়মের প্রশ্ন তোলেন পরাজিত প্রার্থীরা। নির্বাচনের আগে-পরে অনেক স্থানে সংঘাত-সহিংসতায় ঘটনাও ঘটে। ২১ মে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ভোটের মাঠে একই চিত্র দেখা যায়। বৃদ্ধি পায় সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা। কেন্দ্র দখল, প্রভাব বিস্তারসহ নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে অনেক সংসদ-সদস্যের বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বুধবার সারা দেশে ৮৭ উপজেলায় তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে তৃতীয় ধাপের ২২ উপজেলায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনেও সংঘাত-সহিংসতার শঙ্কা করা হচ্ছে।
বিএনপিবিহীন নির্বাচনে পর্যাপ্ত ভোটার উপস্থিতি নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে আওয়ামী লীগে। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের ভোটার উপস্থিতি ছিল ৩৭.৫৭ শতাংশ। এর আগে প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৩৬.১০ শতাংশ। দুই ধাপের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে আওয়ামী লীগের নানা উদ্যোগ কাজে আসেনি। আজ তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
তথ্যসুত্রঃ যুগান্তর