অনেকরই মাঝ রাতে এমনকী দিনের বেলাতেও হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। কখনো কখনো ঘুম থেকে ওঠার সময় শরীরটা হঠাৎ যেন পাথরের মতো ভারি লাগে। নড়াচাড়া করা যায় না, কথা বলার চেষ্টা করলেও গলা দিয়ে শব্দ বের হয় না। তখন মনে হতে পারে অদ্ভুত কোনো শক্তি আপনার শরীর চেপে ধরেছে।
আমাদের দেশে একে ‘বোবায় ধরা’ বলা হয়। অনেকে মনে করেন, এ ঘটনার সঙ্গে ভূত-প্রেতের সম্পর্ক আছে। কিন্তু বিজ্ঞান এই বিষয়ের কী বলে?
বিজ্ঞানীরা একে স্লিপ প্যারালাইসিস বলেন। এটা এক ধরনের ঘুমের সমস্যা।
সাধারণত ঘুম থেকে ওঠার ঠিক আগের মুহূর্তে অথবা ঘুমানোর সময় এমনটা ঘটে। ঘুমের দুটি ধাপ আছে—র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা রেম এবং নন-রেম। রেম ঘুমের পর্যায়ে আমাদের মস্তিষ্কে স্বপ্ন দেখা শুরু হয় এবং এ সময় শরীরের পেশিগুলো কিছুটা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। অনেকটা পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগির মতো অসাড় হয়ে যায় হাত-পাসহ গোটা শরীর।
ঘুমের এই পর্যায়ে যদি আপনার ঘুম ভেঙে যায়, তাহলে বোবায় ধরার ব্যাপারটা ঘটতে পারে।
হঠাৎ এভাবে জেগে ওঠার পর অনেক সময় শরীর ও মস্তিষ্কের সমন্বয় ঘটে না। মস্তিষ্ক পুরোপুরি জেগে উঠতে পারে না তখন। আপনি এসময় চোখ খুলতে পারেন, দেখতে ও শুনতেও পারেন। অর্থাৎ অনুভূতি ফিরে আসে।
কিন্তু মস্তিষ্ক পুরোপুরি না জেগে ওঠার কারণে শরীর ঠিকভাবে সাড়া দেয় না। তখনই আপনি বোবায় ধরার অভিজ্ঞতা পান।
বোবায় ধরার অনুভূতি অনেকের কাছে ভয়ংকর হতে পারে। কেউ কেউ মনে করনে, তাঁকে কেউ চেপে ধরেছে বিছানার সঙ্গে অথবা বুকের চেপে বসে আছে কেউ। কিন্তু বুকের ওপর কাউকে দেখতে পান না রোগি। তাই ভাবেন, কোনো অদৃশ্য শক্তি তাঁকে চেপে ধরেছে। স্বাভাবিকভাবেই ভিক্টিম কুসংস্কারের প্রভাবে মনে করেন, তার বুকে হয়তো ভূত-জাতীয় কিছু বসে ছিল।
আসলে তখন মস্তিষ্ক অর্ধসচেতন অবস্থায় থেকে যায় এবং ঘুমের রেম পর্যায়ে দেখা ভয়ানক স্বপ্নের প্রভাবও রয়ে যেতে পারে। ফলে, বাস্তব ও স্বপ্নের একধরনের মিশ্র অনুভূতি তৈরি । রোগি মনে করেন ভৌতিক কিছু ঘটছে।
অনেকে মনে করেন, বোবায় ধরার অভিজ্ঞতার পেছনে ভূত-প্রেতের ব্যাপার আছে। তবে বিজ্ঞান এ ধরনের ব্যাখ্যা সমর্থন করে না। এসব কেবল মানুষের ভয় এবং কল্পনার প্রতিফলন। এ ব্যাপারটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং ব্যাখ্যাযোগ্য একটি শারীরিক ও মানসিক অবস্থা।
বোবায় ধরা প্রতিরোধ করা যায় কীভাবে?
নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত ঘুম পেলে স্লিপ প্যারালাইসিসের সম্ভাবনা কমে। মানসিক চাপ কম থাকলে ঘুমের সমস্যা কম হয়। তাই বোবায় ধরার অভিজ্ঞতাও কমে যায়। চিৎ হয়ে না শুয়ে পাশ ফিরে শোয়ার অভ্যাস করলে বোবায় ধরা কমানো সম্ভব।
মোটকথা, বোবায় ধরা কোনো ভৌতিক বা অতিপ্রাকৃত ঘটনা নয়। এটি সাধারণ ঘুমের সমস্যা এবং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। নিয়মিত ঘুম এবং মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখলে এই সমস্যাটি সহজেই এড়ানো যায়। তাই, এর সঙ্গে ভূত-প্রেতের কোনো সম্পর্ক না খুঁজে বরং ঘুমের স্বাস্থ্য রক্ষা করার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
সুত্র: ল্যানসেট