বৈষম্য বিরোধী ছাত্র প্রতিনিধির অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল মামুনকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহারের নির্দেশের প্রতিবাদ জানিয়েছে উপজেলা বিএনপি ও জামায়াত নেতৃবৃন্দ।
ইউএনওকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বুধবার রাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সদরপুর উপজেলার রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ ইউএনওর পক্ষে কথা বলেন এবং এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে তারা প্রতিবাদ জানান।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) রাতে সদরপুর উপজেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনে প্রতিবাদ জানান সদরপুর উপজেলা বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সদরপুর উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দরা। তারা বলেন, ইউএনও কে নিয়ে প্রকাশিত বক্তব্য ও অভিযোগের বিষয়ে জানাচ্ছি যে, পূর্বে সদরপুরে শহিদদের স্মরণে স্মরণ সভা ও সংবর্ধনা সভায় ও সভাশেষে ইউএনও আল মামুন এ ধরনের কোনো বক্তব্য দেননি বা কোন সময়েই বলেননি। ইহা উদ্দেশ্যে প্রনোদিত হিসাবে প্রতীয়মান। আমরা সদরপুরের ইউএনও কে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়ার বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ও মৌখিক প্রত্যাহারের আদেশ ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করাসহ সত্যতা যাচাই পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, সদরপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কাজী বদরুজ্জামান, সাবেক সভাপতি গোলাম রব্বানী, সদস্য সচিব তরিকুল ইসলাম কবির, যুগ্ন-আহবায়ক বাহালুল মাতুব্বর, বাবুল হোসেন, বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামি সদরপুর শাখার আমির মোঃ দেলোয়ার হোসেন, বিএনপি যুবদলের প্রস্তাবিত আহবায়ক মো. বিল্লাল হোসেন, উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হাসিব সিয়াম প্রমূখ।
জানা যায়, বুধবার (১১ ডিসেম্বের) দুপুরে ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যদের মতবিনিময় সভায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র প্রতিনিধি আনিসুর রহমান সজল বক্তব্য প্রদানকালে অভিযোগ করেন, সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন মন্তব্য করেন ‘আওয়ামী উইল কাম ব্যাক টুডে অর টুমোরো’ । তবে এমন কোনো মন্তব্য করেননি বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেসুর রহমান, জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান তালুকদারসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সভায় বক্তব্য দেন ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আনিসুর রহমান সজল। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সম্প্রতি সদরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইউএনও আল মামুন। অনুষ্ঠানে আমি বক্তব্য রাখি। সেখানে দিল্লি না ঢাকার প্রশ্নে বলা হয়েছিল, দিল্লির কোনো প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ চলবে না।’
আনিসুর রহমান বলেন, ‘এরপর ওই ইউএনও আমাকে ডেকে নিয়ে কথা বলেন। ওই সময় তিনি তাঁর অঙ্গ ভঙ্গিতে এবং আমাদের ছলে কৌশলে বলার চেষ্টা করেন, আওয়ামী লীগ উইল বি কাম ব্যাক, টুডে অর টুমোরো (আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে, আজ অথবা আগামীকাল)।’
তাঁর এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে কথা বলা শুরু করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেসুর রহমান। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ওই ইউএনওকে প্রত্যাহারের জন্য জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান তালুকদারকে নির্দেশ দেন।
সচিব মো. মোখলেসুর রহমান ওই শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনার সঙ্গে আমি একমত। যারা আমার সঙ্গে একমত হবে না, তাহলে আমি চলে যাব।’
তিনি বলেন, ‘আজকের মধ্যে এই ইউএনও বদলি হবে এবং আমি আগামীকাল মন্ত্রণালয়ে ফিরে গিয়ে তাঁকে সাসপেনশন করব। আমি পাবলিক্যালি বলে গেলাম, এত দুঃসাহস? এখনো যারা পরিবর্ধিত সরকারের পেছনে এখনো ইন্ধন জোগাচ্ছে। যদি কোনো পুরুষ বা কোনো পদ-পদবিধারী কেউ এদের পৃষ্ঠপোষকতা করে গোপনে আমাদের সংবাদ দেবেন।’
এ সময় ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে সচিবের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করেন সংস্কার কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ইউএনওর বিষয়ে আজই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও আল মামুন, ‘আমি এমন কোনো কথাই বলিনি। ওনাদের সঙ্গে যখন কথা বলি তখন বিএনপি–জামায়াতের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। ওই ধরনের কথা বলা হয়নি।