সোনারগাঁ প্রতিনিধি ঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মঙ্গলেরগাঁও এলাকার বাসিন্দা আলাউদ্দিন মিয়া। ওই এলাকায় তাকে সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু, লুটপাটকারী হিসেবে চিনেন সবাই। আওয়ামলীগ সরকারের আমলে পুরো সোনারগাঁ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি। কখনো আওয়ামীলীগ, কখনো জাতীয়পাটি অর্থাৎ যাকে দিয়ে তার উপকার হতো, যার প্রভাব দিয়ে সে নিজেকে এলাকায় ক্ষমতাশালী হিসেবে দেখাতে পারতো তার সাথেই সখ্যতা করে পুরো গ্রামটি তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করতো। আলাউদ্দিন এতই ক্ষমতাশালী ছিলো যে তিনটি খুনের মামলার চার্জশিটভূক্ত আসামী হয়েও সে গ্রেফতার না হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, ২০২১ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে চিটাগাং বিল্ডার্স এর বালু ভরাটকে কেন্দ্র করে আলাউদ্দিন ও তার সহযোগীরা মিলে এলাকার অসহায় নিরাপরাদ ব্যক্তি সাইদুল মিয়া, সমর আলী, আলী আহম্মদকে বেধরক পিটিয়ে মারাত্মকভাবে যখম করলে ওই তিন ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছিলো কমপক্ষে অর্ধশত মানুষ। এ ঘটনায় সন্ত্রাসী আলাউদ্দিন মিয়া ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের স্বজনরা। কিন্তু আলাউদ্দিন মিয়া জামিনে বের হয়ে বিভিন্ন ভাবে ওই গ্রামের মানুষকে হুমকি দিয়ে আসছেন। এলাকায় প্রবেশ করেই সে গ্রামবাসীকে দেখে নেওয়ারও হুমকি দিচ্ছেন।
এলাকাবাসী জানান, চিটাগাং বিল্ডার্স নামে একটি কোম্পানীর জমিতে বালু ভরাটকে কেন্দ্র করে ২০২১ সালের ১৯ ও ২০ তারিখ দফায় দফায় গ্রামের বিভিন্ন সাধারণ মানুষের উপর হামলা চালায় আলাউদ্দিন মিয়া ও তার সহযোগীরা। আলাউদ্দিন এতটাই শক্তিশালী ছিলো তৎকালীন সোনারগাঁ থানার অফিসার (তদন্ত) ও অফিসার সেকেন্টসহ প্রায় বিশজন কনস্টেবলের উপস্থিতিতেই সাধারণ মানুষের উপর হামলা চালিয়েছেন এই ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগের দোষর আলাউদ্দিন ও তার সহযোগীরা। আলাউদ্দিন এলাকার নিরীহ মানুষের উপর হামলা চালানোর সময় চালিভাঙ্গা, বন্দরসহ আশপাশের এলাকা থেকে সন্ত্রাসী ভাড়া করে গ্রামবাসীর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। তার কথা গ্রামের মানুষ না শুনলেই সে বাড়ি ঘরে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট চালানো শুরু করেন। আলাউদ্দিন ও তার ছেলে ইয়ানবী, নূরনবী,তার ভাইরার ছেলে দ্বীন ইসলামসহ একটি গ্রুপ রয়েছে যারা আলাউদ্দিনের হুকুম তামিল করে সবসময়।
বুধবার তিন খুন মামলার আসামী আলাউদ্দিন মিয়া ও তার সহযোগীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ, ঝাড়– মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন গ্রামবাসী। দুপুরে নয়াগাঁও এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন নারী পুরষসহ কয়েকশত বাসিন্দারা। এসময় নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী জানান, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি কোম্পানীর বালু ভরাটকে কেন্দ্র করে সাইদুল মিয়া, সমর আলী ও আলী আহম্মদকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছেন ওই এলাকার আলাউদ্দিন মিয়া ও তার সহযোগীরা। দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও এ হত্যা মামলার রায় আটকে আছে। দ্রুত এই হত্যা মামলার রায় বাস্তবায়নের দাবি জানান এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে নিহতের স্বজনরা জানান, সন্ত্রাসী, খুনী ও হত্যা মামলার আসামী আলাউদ্দিন মিয়া ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগের দোসর হয়ে দীর্ঘ দিন গ্রামবাসীর উপর অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন চালিয়েছেন। ছাত্র জনতার অভূত্থানে হাসিনা ও ফ্যাসিষ্টদের দোসররা পালিয়ে গেলে এলাকার মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। সরকার পরিবর্তনের পর সন্ত্রাসী আলাউদ্দিন মিয়া গাঁ ঢাকা দিয়ে রয়েছে। তবে সম্প্রতি আলাউদ্দিন মিয়া স্থানীয় বিএনপির সাথে আতাত করে এলাকায় ফিরতে চাইছেন। সন্ত্রাসী আলাউদ্দিন ঘোষনা দিয়েছেন এলাকায় এসেই তিনি তার বিরুধীতা কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
নিহত সাইদুলের স্ত্রী সখিনা বেগম জানান, আমার স্বামী অসহায় মানুষ। তিনি সাধারণ মুদী দোকানি ছিলেন। তার কি অপরাধ ছিলো। তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে আলাউদ্দিন মিয়া ও তার সহযোগীরা। মানববন্ধনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সখিনা বেগম। তিনি বলেন একমাত্র ছেলেকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে রয়েছি। আর অপেক্ষায় আছি কবে এই দানব আলাউদ্দিনের ফাঁসি হবে।
মোশাররফ হোসেন নামে এক ব্যক্তি জানান, আলাউদ্দিন কখনো আওয়ামীলীগ, কখনো জাতীয়পার্টি করতো ওর কাজের প্রয়োজনে যখনই যে দল সুবিধা হতো সে ওই দলই করতো। যাদের দিয়ে এলাকায় বিশৃংখলা করা যেতো ওদের সাথেই সে থাকতো। ওদের সাথেই আতাত করতো। শুনতেছি দাপনরুপী সন্ত্রাসী আলাউদ্দিন আবারো এলাকায় আসতে চাইছে। এলাকায় আসলেই সে একটা না একটা মার্ডার করবে। মানুষের বাড়ি ঘর লুটপাট করবে। তাই আমরা চাই সন্ত্রাসী আলাউদ্দিন সুষ্ঠ বিচার। সে যেন এলাকায় না আসতে পারে। একেতো সে খুনের আসামী আবার অত্যাচারকারী। তাই এই অত্যাচারী,সন্ত্রাসী আলাউদ্দিনের হাত থেকে নয়াগাঁও গ্রামের সকল বাসিন্দারা রক্ষা চায়।
আলেক মিয়া নামে এক ব্যক্তি জানান, এই সন্ত্রাসী আলাউদ্দিনের আমরা ফাঁসি চাই। নিরাপরাদ মানুষগুলোকে মেরেছে। আবারো এলাকায় এসে ত্রাসের রাজক্ত কায়েম করতে চাইছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের মোটা অংকের টাকা খাইয়ে এলাকায় এসে গ্রামটিকে আবারো আতংকের জনপদে রুপ দিতে চাইছে আমরা এই খুনীকে এলাকায় জায়গা দিতে চাই না। তার শাস্তির দাবি জানাই সরকারের উচ্চ কর্মকর্তাদের কাছে।
বরকত মোল্লা জানান, মানুষরুপী একজন দুর্ধর্ষ দানব আলাউদ্দিন মিয়া। সাধারণ মানুষের রক্ত দেখলেই তিনি খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান। পরপর তিনজনকে খুন করেও তিনি ক্ষ্যান্ত হননি। ফের এলাকায় অশান্ত সৃষ্টি করে আবারো লাশের মিছিল দেখতে চাচ্ছেন তিনি। সেজন্য এলাকায় ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে জোড়পূর্বক দখল করতে চাইছেন এলাকার জমিজমা ও ঘরবাড়ি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, খুনের মামলার আসামী হয়ে জামিনে বের হয়ে বাদি ও এলাকাবাসীকে হুমকি দিচ্ছে। এলাকায় গিয়ে আবারো মানুষ খুন করার পরিকল্পনা করছে এমন ব্যক্তি আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। এলাকার আইনশৃংখলার অবনতি যেন না ঘটে সেজন্য পুলিশ প্রশাসন সবসময়ে খেয়াল রাখবে।