সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি :
সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামীলীগের দোসর ও চিহ্নিত ভূমিদস্যু জালাল উদ্দিন ওরফে তেল জালাল ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ২৪ এর জুলাই-আগষ্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তাঁর দোসরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় কয়েকমাস নিরব থাকার পর আবারো ভূমিদস্যুতায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে এই চিহ্নিত ভূমিদস্যু ও মামলাবাজ জালাল উদ্দিন ওরফে তেল জালালের বিরুদ্ধে। তার অপকর্মের সংবাদ প্রকাশ করলে গনমাধ্যম কর্মীদেরকে মিথ্যে মামলা ও লিগ্যাল নোটিশের হুমকি দেয়া হয় বলেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এই জালালের বিরুদ্ধে।
ভূমিদস্যু জালাল উদ্দিন ওরফে তেল জালাল সিদ্ধিরগঞ্জের আটি এলাকার মৃত আশরাফ আলীর ছেলে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের মামা শশুর জালাল উদ্দিন ওরফে জালাল মামা এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়ার ঘনিষ্ঠজন পরিচয়ে মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন জনের জায়গা-জমি জাল দলিল করে জোরপূর্বক দখলের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার ভূমিদস্যুতা থেকে রক্ষা পেতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেছে একাধিক ভুক্তভোগীরা। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের মামা শ^শুর জালাল উদ্দিন ওরফে জালাল মামা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিনের শেল্টারে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মৌচাক বাস স্ট্যান্ড এলাকায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অধিগ্রহনকৃত একটি জমি জাল দলিল সৃজনের মাধ্যমে দখল করে মার্কেট নির্মানের অভিযোগ উঠেছে ভূমিদস্যু জালাল উদ্দিন ওরফে তেল জালালের বিরুদ্ধে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন বিনা চালানে মার্কেটের বেশ কয়েকটি দোকান পায়। আর এই মার্কেটটির পাহাড়ার দায়িত্বে ছিল ইয়াছিনের ছোটভাই আবু বকর সিদ্দিক আবুল। আওয়ামীলীগ সরকার পতনের কিছুদিন পূর্বে ডিএনডি প্রজেক্টের কার্যক্রম চলাকালীন ক্যানেলের সংযোগের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের জমিতে নির্মিত মার্কেট ও দোকানপাট উচ্ছেদ করে ডিএনডি প্রজেক্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর কাজ শেষে উচ্ছেদকৃত জমিটি খালি পড়ে থাকলেও আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর থেকে সারাদেশের ন্যায় সিদ্ধিরগঞ্জের প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতারা আত্মগোপনে থাকায় ভূমিদস্যু জালাল ভয়ে দখলের চেষ্টা করেনি। সম্প্রতি দেশ কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোড়ালো তৎপরতা না থাকায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের জমিটি ফের নিজের দাবি করে মার্কেট নির্মাণ শুরু করে ভূমিদস্যু জালাল। মার্কেট নির্মানের খবর পেয়ে সওজ কর্তৃপক্ষ এসে কাজ বন্ধ করে দেয়। এমনি অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে এই ভয়ঙ্কর ভূমিদস্যু জালালের বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমন অনেক তথ্য।
আটি এলাকার ভুক্তভোগী নবীর হোসেন বলেন, আটি মৌজায় সিএস দাগ নং-২৩৯ ও আরএস ৩৮০ দাগে আমার সাড়ে তিন শতাংশ পৈত্তিক ক্রয়কৃত সম্পত্তি বিগত দিন থেকে আমরা ভোগ দখলে আছি। ভূমিদস্যু জালাল উদ্দিন আমার জমিতে জোড় পূর্বক টিনের বেড়া দিয়ে দখলের চেষ্ট করছে। আমার পৈত্তিক সম্পতিতে সাইনবোর্ড লাগাতে গেলে সাইনবোর্ড তুলে ফেলে এবং অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করে এবং প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করেন। ভূমিদস্যু জালাল উদ্দিন যে কোন সময় আমার বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করতে পারে।
ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আটি মৌজায় সিএস দাগ নং-২৩৯, আর এস দাগ নং-৩৮০ দাগে ৩০৮১ নং দলিল মূলে তিন শতাংশ জমি ক্রয় করে ভোগ দখল করিতেছি। বিগত ২০২২ সালের ২ জানুয়ারী তারিখে ভূমিদস্যু জালাল উদ্দিন জোড় পূর্বক আমার জমিটি দখল করে নেয়। উক্ত জমিতে সাইনবোর্ড দিতে গেলে বাঁধা প্রদান করে এবং প্রাণ নাশের হুমকি দেয়।
আব্দুল মালেক নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমার আটি মৌজায় সিএস দাগ নং ২৪১/২৩৮ ও আরএস দাগ নং-৩৮৪/৩৮১ হতে দেড় শতাংশ জমি জাল দলিল করে জোড় পূর্বক দখল করে নেয়। একই মৌজার সিএস দাগ নং-২১৬ হইতে সাত শতাংশ জমি জালালের কাছে বিক্রি করি। উক্ত জমি বিগত ১৯৭৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর ইং তারিখে রেজিষ্ট্রি করার সময় আমার ছোট ভাই মৃত আব্দুল খালেকের সাত শতাংশ জমি আমার ছোট ভাইকে নাবালক সাজিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে আমার নিকট হতে আমার ছোট ভাইয়ের জমি লিখে নেয়।
আটি এলাকার লোকমান হোসেন জানান, আটি মৌজায় সিএস দাগ নং-২৪০ ও আরএস দাগ নং-৩৮২/৩৮৩ দাগে আমার ক্রয়কৃত চার শতাংশ সম্পত্তিতে বাড়ী করিয়া ভোগ দখল করে আসিতেছি। আমর বাড়ীর পূর্ব দিকে যাতায়াতের রাস্তা জন্য রয়েছে। উক্ত রাস্তা জোড় পূর্বে দখল করার পায়তারা করছে ভূমিদস্যু জালাল উদ্দিন। উক্ত রাস্তার জায়গা দখল করার জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়ার চেষ্টা করিতেছে। যে কোন সময় ভূমিদস্যু জালাল উদ্দিন আমার যাতায়তের রাস্তা বন্ধ করে দিবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জালাল উদ্দিন মুঠো ফেনে বলেন, আমি অসুস্থ্য তাই এখন কথা বলতে পারব না বলে ফোনটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।