আ.লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা,
নির্দেশনা অমান্য করা এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত * মেয়াদোত্তীর্ণ শাখাসহ সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন নিয়ে নির্দেশনা আসতে পারে
দিবসভিত্তিক কর্মসূচি চূড়ান্তের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায়। বিশেষ গুরুত্ব পাবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়টি। দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে মাঠে থাকা এমপি-মন্ত্রীর স্বজন ও সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত আসতে পারে এ বৈঠকে। এছাড়া দলীয় ও স্বতন্ত্র এমপিদের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিরসনে দেওয়া হবে দিকনির্দেশনা। বিএনপির সামনের দিনের কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচন ঘিরে তাদের কর্মসূচির বিপরীতে নিজেদের কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা করবে আওয়ামী লীগ। দলের মেয়াদোত্তীর্ণ শাখা কমিটির সম্মেলন, কমিটি গঠনসহ মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন নিয়ে সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা আসতে পারে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এবং দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তারা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সভা সামনে রেখে দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাকিয়ে আছেন ৩০ এপ্রিলের দিকে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় গণভবনে আমাদের দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের বেশকিছু এজেন্ডা রয়েছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। সভায় সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়েও আলোচনা হবে। উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ নিয়ে তো কথা হবে। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ইতোমধ্যেই বলেছেন। আরও কিছু বিষয় রয়েছে, সেগুলো নিয়েও আলোচনা হবে। আমাদের সাংগঠনিক রীতিনীতিতে যেভাবে আছে, সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর এমপি যুগান্তরকে বলেন, সামনের দিনের বিভিন্ন দিবসভিত্তিক কর্মসূচিগুলো নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে। এছাড়া নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সমসাময়িক রাজনীতি নিয়েও আলোকপাত করতে পারেন। সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে নেত্রী যেভাবে দিকনির্দেশনা দেবেন, আমরা সেভাবেই কাজ করব।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, এবারের সভায় ১৬টি এজেন্ডা রেখেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে শোকপ্রস্তাব পাঠ ছাড়াও আলোচ্যসূচিতে আরও রয়েছে-মহান মে দিবস, ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ২৫ মে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী, ৭ জুন ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস, ২৩ জুন আওয়ামী লীগের হীরকজয়ন্তী উদ্যাপন ও বছরব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ, ৫ আগস্ট শহিদ শেখ কামালের জন্মদিন, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদ দিবস, ২৪ আগস্ট আইভী রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী, ২৭ আগস্ট কবি নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী পালন, সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সাংগঠনিক ও বিবিধ।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের কঠোর নির্দেশনার পরও আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের প্রায় সবাই উপজেলার ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন। এছাড়া পরবর্তী ধাপের নির্বাচনগুলোয়ও মাঠে আছেন আরও অনেকেই। এমপি ও তাদের স্বজনরা নানা যুক্তি সামনে আনছেন। এতে বিব্রত ও ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। নির্দেশনা অমান্য করা এমপি-মন্ত্রী এবং তাদের স্বজনদের তালিকা তৈরি করছেন তারা। কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সাংগঠনিক সম্পাদকরা রিপোর্টে এ তালিকা তুলে ধরবেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের অন্তত তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদক যুগান্তরকে বলেন, দলের নির্দেশনা অমান্য করে যেসব এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা উপজেলা নির্বাচন করছেন, তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এগুলো তারা ৩০ এপ্রিল দলীয় সভাপতির সামনে উপস্থাপন করবেন। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা এ বিষয়ে যে নির্দেশনা দেবেন, সেই মোতাবেক তারা তাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রী ও সংসদ-সদস্যদের বিষয়ে দলীয় এ সিদ্ধান্ত উপজেলা নির্বাচনের চার পর্বের জন্যই প্রযোজ্য হবে। তবে এমপিদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা এবং তাদের স্বজনদের বিরুদ্ধেই বা কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা এখনো পরিষ্কার করা হয়নি দায়িত্বপ্রাপ্তদের তরফ থেকে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের মধ্যেও আছে ভিন্ন ভিন্ন মত। এছাড়া কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা এবং সংসদ-সদস্যের স্বজন নির্দেশনা অমান্য করে ভোটে লড়ছেন। তাদের বিষয়ে দলীয় সভাপতির নির্দেশনা বা বক্তব্য কী হয়, তাও দেখার অপেক্ষা করছেন অনেকে। এছাড়া পরবর্তী ধাপে নির্বাচনি মাঠে আছেন-এমন অনেকেই তাকিয়ে আছেন প্রথম ধাপে মাঠে থাকাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয় সেদিকে।
দলীয় সূত্র বলছে, ক্ষমতাসীন দলের সভায় বিএনপিসহ বিরোধীদের কর্মকাণ্ড এবং কর্মসূচির বিষয়গুলোও আলোচনায় আসতে পারে। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান ও কর্মসূচি সার্বিকভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি ইতোমধ্যে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি শুরু করেছে। এর পালটা কর্মসূচি হিসাবে জনগণকে নির্বাচনমুখী করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে পারে আওয়ামী লীগ। এছাড়া নির্বাচনকে কীভাবে আরও অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা যায়, সে বিষয়গুলোও নিয়ে আলোচনা ও দিকনির্দেশনা আসতে পারে সভা থেকে।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন এবং কমিটি গঠনের কাজ স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে নির্বাচনের পরই মেয়াদোত্তীর্ণ এসব শাখা কমিটি নিয়ে আরও জোরেশোরেই কাজ শুরু করবে আওয়ামী লীগ। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলনও দ্রুত করে ফেলতে চায় দলটি। এ বিষয়ে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিতে পারেন।
সুত্র: যুগান্তর