ষ্টাফ রিপোর্টার:
ফতুল্লা স্টেশন এলাকায় ফুটপাতে হকার ও সাপ্তাহিক হাট বসিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজী করছে এলাকার বিএনপির তিন বিতর্কিত ব্যক্তি মীর নয়ন, লাল মামুন, গাঁজা রাসেল। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপি সহ সাধারন মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সচেতন মহলপ্রশ্ন তুলেছেন এজন্য কি ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে? তাদের প্রশ্ন রেলস্টেশনের চাঁদাবাজী বন্ধ করবে কে?
গত বছর ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার পালিয়ে গেলে ফতুল্লা রেলস্টেশন আওয়ামী লীগের আফিস দখল করে নেন বিএনপি’র লোকজন। এর কিছু দিন পর শুরু হয় এই তিন বিতর্কিত ব্যক্তিদের চাঁদাবাজি। পাশাপাশি বিএনপির ক্লাবে বিচার সালিশের নামে চলছে মানুষকে হয়রানি।
এদিকে সাধারণ মানুষকে ব্ল্যাকমেইল, বিচার সালিশের নামে টাকা আত্মাসাত ঘটনায় বিএনপি নেতা ও স্থানীয় মানুষ বিব্রত। এর ফলে প্রশ্ন উঠেছে তাদের খুঁটির জোড় নিয়েও।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিভিন্ন কৌশলে চাঁদা উঠাচ্ছে তারা। সাপ্তাহিক শনিবার রেলওয়ের খালি জায়গায় হাট বসিয়েও হাজার হাজার টাকা চাঁদা তোলছে তারা। দোকান থেকে বাকী নিলেও টাকা না দিয়ে টালবাহানা করে দেই দিচ্ছি বলে আর দেয় না। চাঁদাবাজী বন্ধ করতে পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে স্থানীয় ভূক্তভোগী ব্যবসায়ী মহল।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, মীর নয়ন কখনো বিএনপির রাজনৈতির সাথে যুক্ত ছিলো না। সে হচ্ছে হাইব্রিড নেতা। আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ার পর কোথায় থেকে ভূঁইফোর সংগঠনের সভাপতি হয়ে লাল মামুন, রাসেলকে নিয়ে এই অপকর্ম করছে। তার পরিবারের কেউ বিএনপির রাজনৈতির সাথে ছিলো না। তার বড় ভাই মারফত মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের নেতা। তার চাচা লাল খা এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা।
এছাড়াও রমজানে ঈদ উপহার বিতরনের নামে বিভিন্ন দোকান থেকে বাকীতে পন্য নেয় ও চাঁদা তুলে তা লোক দেখানোর জন্য বিতরণ করে। এখনও অনেক দোকানদার বাকী টাকার জন্য তার কাছে চেয়ে না পেয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে শরণাপন্ন হচ্ছে।
লাল মামুন ফতুল্লা ইউনিয়ন ২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেলের হাত ধরে যুবলীগে যোগদান করেন সে। যুবলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে কেক কাটার ছবি মীর সোহেল, যুবলীগ নেতা বোটকা শাহিনসহ অন্য নেতাদের সাথে লাল মামুর ছবি ভাইরাল হয়। সেই সময় যুবলীগ নেতা বোটকা শাহিনের সাথে মিলে দাপা মসজিদ এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজিসহ মানুষকে নানা ভাবে হয়রানির করার অভিযোগ রয়েছে। এখন রেলস্টেশন এলাকায় এসে বিএনপি সেজে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি ও সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে মামুন।
রাসেল ওরফে গাঁজা রাসেল ফতুল্লা ইউনিয়ন ১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ সরকার সময় তেমন কোন মিছিল মিটিং দেখা না গেলেও বর্তমানে ব্যনার ফেষ্টুন লাগিয়ে নিজেকে বড় নেতা বলে প্রচারনা চালিয়ে চাঁদা বাজীর সাথে যুক্ত রয়েছে। এছাড়াও ফতুল্লা রেলস্টেশন মাদক সেবীদের সাথে প্রকাশে মাদক (গাঁজা) সেবন করার কারনে স্থানীয় লোকজন ও পথচারীদের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।
এমতাবস্থায়, এদের অপকর্মের হাত থেকে রক্ষা পেতে চায় ফতুল্লা রেলস্টেশন এলাকার ব্যবসায়ীসহ সাধারন মানুষ।
এ বিষয়ে মীর নয়নের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো মিথ্যা দাবী কে বলেন, আমি ষ্টেশন এলাকা থেকে কোন চাদাঁ উত্তোলন করিনা। আমি আওয়ামীলীগের কোন রাজনীতি করিনি এবং আমি,রাসেল ও লাল মামুনের বিরুদ্ধে অনেকেই মিথ্যাচার করতে পারে। তবে সেটা হয়তবা প্রতিপক্ষের কেউ হবে। দোকান বাকী সর্ম্পকে তিনি বলেন,আমি কারোর কাছ থেকে কোন জিনিস বাকী নেইনি তবে আমার এক আত্মীয় দোকানী আমার কাছে তিন হাজার টাকা পাবে। আপনি প্রয়োজনে সরেজমিনে এসে বিস্তারিত জানুন।
এ বিষয়ে লাল মামুনের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো মিথ্যাদাবী করে বলেন, এগুলো পুরোটাই মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি এখানে কোন চাদাঁবাজি করিনা। যদি কেউ প্রমান করতে পারে তাহলে আমি স্বেচ্ছায় আইনের কাছে ধরা দেবো। আওয়ামীলীগের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি মীর সোহেলের চেলের জন্মদিন উপলক্ষে হয়তবা তার সাথে একটি ছবি থাকতে পারে। তাছাড়া দাপা এলাকার বোটকা শাহীনের সর্ম্পক রেখে চলতে হতো। তা না হলে সে আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দিতো। নেতার অন্তরালে বোটকা শাহীন মুলত পুলিশের সোর্স ছিলো।
এ বিষয়ে রাসেলের ব্যবহৃত মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,মুলত ৫ আগষ্টের পর থেকে এখানে কোন চাদাঁবাজি হয়না এবং আমরা কোন চাদাঁবাজকে প্রশ্রয় দেইনা। প্রয়োজনে আপনারা যাচাই-বাচাই করুন। যদি তাতে আমার সর্ম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাহলে আমি নিজেই নিজেকে আইনের কাছে সোপর্দ করবো।