ষ্টাফ রিপোর্টার:
গত কয়েক মাস সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জের “অপারেশন ডেভিল হান্ট” কার্যক্রম চলাকালেও গ্রেফতার হয়নি পশ্চিম মাসদাইর এলাকায় ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী দোসররা। ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার তোপের মুখের পরে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হলে তার সাথে পালিয়ে যায় বিগত ১৭ বছরে দেশ ও নারায়ণগঞ্জের অপরাধ জগতের হোতারা। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত ওসমান পরিবারের শামীম ওসমান, অয়ন ওসমান, আজমেরী ওসমান বর্তমানে পালিয়ে দেশের বাহিরেই অবস্থান করছেন।
বিগত দিনে এনায়েতনগর ইউনিয়নের মাসদাইর ছিলো কুখ্যাত প্রধান পরিবারসহ আওয়ামী লীগ গ্রুপের দোসরদের দখলে। এদিকে ওসমান পরিবারের সদস্যরাসহ বিগত দিনে প্রধান বাড়ির ছেলে রিয়াদ ও রাফেলের মতো অপরাধীরা দেশের বাহিরে থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের যে নির্দেশনা দিচ্ছেন তা শুনেই দেশের প্রত্যন্ত স্থানে নানাবিধ অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। জেলার অন্যান্য থানাগুলোতে ডেভিল হান্টের কার্যক্রম চোখে পড়ার মত হলে ব্যতিক্রম শুধুমাত্র ফতুল্লা থানাতে।
এখানে আইনের প্রতি নজর না দিয়ে নেতাদের আত্মীয়তার প্রতি নজর দেয়া হয়েছিলো বেশী। এখানে আওয়ামীলীগের ডেভিলগুলো বিএনপির নেতাকর্মীদের আত্মীয়-স্বজন হওয়ার সুবাদে সাধারন ক্ষমা পেয়ে গোপনে তারা তৈরী হচ্ছে অন্তবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জন্য এমনটাই মনে করছেন শান্তিকামী সাধারন মানুষ। এদিকে অপারেশন ডেভিল হান্টের কার্যক্রম থেকে একেবারে বিছিন্ন ছিলো মাসদাইর ও আশপাশ এলাকার আওয়ামী লীগ ডেভিলরা। যারা বিগত দিনে ওসমান পরিবারের নামে মাসদাইরকে অস্থিশীল করে রেখেছিলেন এরা বর্তমানে কেউ বিএনপি নেতা, কেউ যুবদল নেতার আত্মীয় সেঁজে বিগত দিনের মতোই নানান অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। বিগত ১৬ বছরে গডফাদার শামীম ওসমান সহ তার সঙ্গীদের পাশে থেকে ভূমিদস্যুতা, ঝুট সেক্টর ও চোরাই তেলের ব্যবসায়ীরা এখনও নিরাপদে নির্বিঘ্নে রয়েছেন তাদের স্বজনরা বিএনপি নেতা হওয়ার সুবাদে। কারো কোন প্রকারের সমস্যার সম্মূখিন হতে হচ্ছে না।
সূত্র জানিয়েছে, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনির ছোট মামা ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান মতি প্রধান যিনি সাবেক সাংসদ ও গডফাদার শামীম ওসমানের আস্থাভাজন ভূমিদস্যু ছিলেন। এমপির কাছের লোক হওয়ার সুবাদে মাসদাইরসহ আশপাশ এলাকার নিরীহ মানুষের জমি দখল করতে জমির মালিককে ভূয়া অভিযোগে জেলে পাঠিয়ে জাল দলিলের মাধ্যমে উক্ত জমি দখল করে অন্যত্র বিক্রি করে এবং বিসিক, মাসদাইর চৌধুরী কমপ্লেক্স ও টাগারপাড় এলাকার বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে ঝুট নামিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে তিনি বনে গেছেন শত কোটি টাকার মালিক। বেকারীর মোড়ে করেছেন বিশাল আলিশান বাড়ি যে কাজ ও তিনি বাসায় থেকেই করছেন। তা ছাড়া পটপরিবর্তনের পর সেই এলাকায় সরকারি ড্রেনের টাকার ভাগসহ বর্তমানে বিসিকের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর ঝুট সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থেকে মাসিক ভাগ পৌঁছে দিয়ে যাচ্ছেন তার আরেক যুবদল নেতা তারই ভাতিজা সাইফুর প্রধান। সব মিলিয়ে দিব্যি ভালোই আছেন এই মতি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকে বলেন,মতিউর রহমান মতি পুর্বের ন্যায় এখন ভালভাবেই দিন কাটাচ্ছেন ভাগিনা যুবদলের রনি ও ভাতিজা সাইফুরের কারনে। তিনি তার নতুন বাড়িতে প্রতিদিনই আওয়ামী দোসরদের নিয়ে নিয়মিভাবে গোপন মিটিং করছেন এবং দলকে সুসংগঠিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। এ জন্য মামাকে যেন কেউ কোন প্রকার সমস্যা না করতে পারে তাই প্রতিনিয়ত ভাগিনা রনি তার বাড়ির নিচে কর্মীদের নিয়েও নাকি আড্ডা দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মাসদাইর কবরস্থান এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীসহ তার ভগিনা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদের সাথে প্রকাশ্য ছাত্র-জনতার বিপক্ষে অবস্থান করার অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী এ ডেভিল অনেকটা নিরাপদে রয়েছেন। রনজিৎ মন্ডল যিনি নারায়ণগঞ্জের অপরাধের শিরোমনি গডফাদার শামীম ওসমানের আর্শীবাদে জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টার ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক হিসেবে থেকে চোরাই তেল, ভুমিদস্যুতা ও ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার উপর হামলার দায়ে ফতুল্লা মডেল থানায় দায়েরকৃত কয়েকটি মামলারও আসামী এ রনজিৎ মন্ডল। রনজিৎ মন্ডলের অপর বন্ধু এনায়েতনগর ইউপির ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার জাকারিয়া জাকিরও শামীম ওসমানের আরেক ঘনিষ্টজন। যিনি বিগত সময়ে ভুমিদস্যুতা ও ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রায় শত কোটি টাকার মালিক বনেছেন। যারা উভয়েই নাকি এক যুবদলের নেতাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে এলাকাতে বসবাস করছেন এমনটাই গুঞ্জন ছেয়ে পড়েছে এলাকা জুড়ে। এছাড়াও রমজান মাসের পুর্বে একাধিক আওয়ামী দোসর নিয়ে রনজিত মন্ডলের বাড়িতে গোপন মিটিংও হয়েছিলো বলে জানান স্থানীয়রা।
যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান মিজান ওরফে বড় মিজান গাফফার গং। এরা সবাই শামীম ওসমানের ভূমিদস্যুতার আস্থাভাজন মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজামের বলয়ে থেকে বিসিকসহ মাসদাইর ও আশপাশ এলাকার ঝুট নিয়ন্ত্রক ছিলেন বলে জানান। কিন্তু ফতুল্লা থানা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ইয়াসির আরাফাতের শশুর হওয়ার সুবাদে বর্তমানে বাসায় আছেন তিনি। এ ছাড়া ছাত্রলীগ নেতা অনিকের বাবা ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জসিম প্রধান, আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান আতা প্রধান, রাফেলের ভাই রাসেল প্রধান সবই বর্তমানে এলাকায় শান্তিতে বসবাস করে যাচ্ছেন একজন যুবদল নেতার বদৌলতে।
শুধু তাই নয় এলাকায় থেকে এই আওয়ামী লীগের সকল সন্ত্রাসীরা মাসদাইরের সকল অপকর্মের ভাগ থেকে শুরু করে বিসিকের গার্মেন্টস ঝুট সন্ত্রাসী সবই করছেন এমনকি ভাগ ও পাচ্ছেন। দল যায় দল আসে দিন শেষে এদের কিছুই হয় না।
তবে স্থানীয়দের দাবী,আইনের ভাষায় যদি আইনের চোখে সবাই সমান হয় তাহলে কিভাবে আত্মীয়তার সুত্রে এ সকল অপরাধীরা আইনের ধরাছোয়ার বাহিরে অবস্থান করেন। তারা অতিদ্রুত আওয়ামী এ দোসরদেও আইনের আওতায় নেয়ার জন্য জেলা পুলিশ সুপারের সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেন।