শেরপুর প্রতিনিধি
শেরপুরের শ্রীবরদীতে হাজতে থাকাকালীন সময়ে বেতন ভাতা উত্তোলন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাজতবাসের সময়ে বেতনে স্বাক্ষর করে বেতন উত্তোলনের চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার টেংগরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন মো.মাসুদুর রহমান ওরফে লাজু তালুকদার।
মামলা ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার টেংগরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. মিজানুর রহমান মিন্টু ওরফে এমআরটি মিন্টু ও তার স্ত্রী মিনারা বেগম সাতানী শ্রীবরদী মহল্লার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে মো. মাসুদুর রহমান লাজু তালুকদারের কাছে জমি বিক্রির কথা বলে ১২ লক্ষ টাকা নেন। কিন্তু জমি রেজিস্ট্রি দলিল করে না দিয়ে পুরো টাকা আত্নসাৎ করেন এমআরটি মিন্টু। এ ঘটনায় মো. মাসুদুর রহমান বাদি হয়ে টেংগরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. মিজানুর রহমান মিন্টুসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে শেরপুরের সিআর আমলী আদালতে মামলা করেন। মামলা নং-৫৭/২০২০, বর্তমান সি.আর ৫৫/২০২২। উক্ত মামলায় টেংগরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো: মিজানুর রহমান মিন্টু ২০২৩ সালের ২ মার্চ আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে আদালত জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। ৯ দিন এমআরটি মিন্টু কারাগারে হাজতবাস করে জামিনে মুক্তি পেলেও মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
চাকুরি বিধিমালা অনুযায়ী কর্মকর্তা/কর্মচারী হাজতবাস হলে সাময়িক বরখাস্ত হবেন এবং মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খোরপোষ ভাতা পাবেন। কিন্ত এ ক্ষেত্রে তাকে বহিস্কার না করে হাজতবাসের সময়সহ নিয়মিত বেতন ভাতা প্রদান করে আসছে কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগকারী মো. মাসুদুর রহমান লাজু তালুকদার জানান, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালসহ মো: মিজানুর রহমান মিন্টুর নামে থানা ও আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি বলেন, হাজতে থাকাকালীন একজন মানুষ কিভাবে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বেতন ভাতায় স্বাক্ষর করেন তা বোধগম্য নয়।
এ ব্যাপারে টেংগরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো: মিজানুর রহমান মিন্টু তাঁর বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব অভিযোগ, মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। সরকারি চাকুরিজীবীদের জন্য ফৌজদারী মামলায় হাজতে গেলে বরখাস্তের বিধান রয়েছে। কিন্তু বেসরকারি স্কুলের কোন কর্মচারী ফৌজদারী মামলায় হাজতে গেলে তাঁকে বরখাস্তের বিষয়ে সরকারের কোন নির্দেশনা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে টেংগরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোববার বিকেলে বলেন, ওই সময় বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি ছিল। ফলে অফিস সহকারী মিজানুর রহমান মিন্টুর বিষয়টি সেভাবে ‘তলিয়ে’ দেখা হয়নি। মানবিক কারণে তাঁকে বেতন প্রদান করা হয়েছে। হাজতবাসকালে তাঁর অনুপস্থিতির সময়টি সিএল বা নৈমিত্তিক ছুটি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিইও) মো: রেজুয়ান বলেন, অভিযোগকারী মো.মাসুদুর রহমান লাজু তালুকদার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মহোদয়ের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। তাঁর কোন অনুলিপি তিনি (ডিইও) পাননি। যেহেতু অভিযোগকারী ডিসি মহোদয়ের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন ফলে তিনিই (ডিসি) এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
অপরদিকে জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম বলেন, টেংগরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মিজানুর রহমান মিন্টুর বিরুদ্ধে একটি দীর্ঘ অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। এটি পড়ে দেখা হচ্ছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।