নারায়ণগঞ্জ বুধবার | ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
  সর্বশেষঃ
সোনারগাঁয়ে নিষিদ্ধ ইয়াবাসহ আটক-২ 
হাসিনা পরিবারের মেগা দুর্নীতি: দেশে-বিদেশে লেনদেনের সব নথি তলব
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত
আড়াইহাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২
ফতুল্লায় ১০০ কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার ১
ফতুল্লায় মৃদুল-ফাতেমা মনিরগং এর বিরুদ্ধে মৎস্যখামার দখলের অভিযোগ!
ইজতেমার ময়দানে সাদপন্থী নয় হামলা চালিয়েছে ভারত ও শেখ হাসিনা!
সাংবাদিক সোহেলের মা’য়ের মৃত্যুতে মডেল রিপোর্টার্স ক্লাবের শোক
সরিষা ফুলের মধু আহরণে স্বাবলম্বী মৌয়ালরা
বকশীগঞ্জে ইউএনও’র বরণ ও বিদায় সংবর্ধনা
ইসলাম শাহ উরফে পাগলা বাবার ৭ দিনব্যাপী উরস মোবারক উদ্বোধন 
প্রশ”সারাদেশে ছিনতাই, ধর্ষন ও হত্যার প্রতিবাদে ছাত্র ফেডারেশন এর মানববন্ধন”
সোনারগাঁয়ে ২৫ কেজি গাঁজা ও পিকআপ ভ্যানসহ আটক-৩
আমতলীর দুই গ্রামে ৪ ইট ভাটা, পরিবেশসহ ফসল বিপর্যয়
আমতলীর ইউএনওর বদলীর আদেশ প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন
আমতলী উপজেলা শাখার জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত
রেলওয়ের জায়গা দখল করে শ্রমিকদল নেতা সফির ঘর নির্মাণ!
অসুস্থ বিএনপি নেতা অধ্যাপক মনিরুল ইসলামকে দেখতে গেলেন মুহাম্মদ সাদরিল
ইসলামপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার বিক্ষোভ সমাবেশ
নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে মানেই চাঁদাবাজীর অভয়ারন্য!
বকশীগঞ্জে রফিক ফাউন্ডেশনের শীতবস্ত্র বিতরণ
বাংলাদেশে হিন্দুদের জন্য কতদূর কী করার আছে ভারতের?
“সারাদেশে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ কলেজ শাখার মানববন্ধন”
আমতলীর ইউএনওর বদলীর আদেশ প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন!
আমতলীতে স্ত্রী হত্যার অভিযোগ, গলায় ফাঁস লাগিয়ে স্বামীর আত্মহত্যার নাটক!
জনগণের রক্ত নিয়ে যারা হোলি খেলেছে তাদেরকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না -মুফতি মাসুম বিল্লাহ
ইসলামপুর মোটর সাইকেল সংঘর্ষে কিশোরের মৃত্যু আহত দুই
সোনারগাঁয়ে ফেন্সিডিলসহ আটক-১
সোনারগাঁয়ে ৪ কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার-১ 
আমতলীতে খাবারের লোভ দেখিয়ে প্রতিবন্ধি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ!
Next
Prev
প্রচ্ছদ
যে ১৫টি ‘জলবায়ু ঝুঁকি’তে আছে বাংলাদেশ

যে ১৫টি ‘জলবায়ু ঝুঁকি’তে আছে বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ

জাগো নারায়ণগঞ্জ:
আজ থেকে এক যুগ আগেও মনে করা হতো, বাংলাদেশের উষ্ণতম মাস এপ্রিল।
আজ থেকে এক যুগ আগেও মনে করা হতো, বাংলাদেশের উষ্ণতম মাস এপ্রিল। অর্থাৎ, তীব্র গরমের উষ্ণতম দিনের সংখ্যা এপ্রিল মাসেই বেশি থাকে।
কিন্তু আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে বছরের উষ্ণতম দিনের সংখ্যা এখন শুধু এপ্রিল মাস তথা গ্রীষ্মকালে সীমাবদ্ধ নেই; বর্ষাকালেও বৃদ্ধি পেয়েছে।
তাদের মতে, গ্রীষ্মকালের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে বর্ষাকালেও তাপপ্রবাহ চলা, এই সবকিছু ঘটছে মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।
ওয়ার্ল্ড ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ঝুঁকিতে আছে, তার মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ দশে।
এর আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ১৪টি জলবায়ু ঝুঁকি চিহ্নিত করে দীর্ঘমেয়াদে সমন্বিতভাবে ‘জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা’ (ন্যাপ) গ্রহণ করেছিলো সরকার।
ন্যাপে বলা হয়েছে, ঐ ১৪টি জলবায়ু ঝুঁকি বা দুর্যোগের হার সময়ের সাথে সাথে বাড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঝুঁকিগুলোর তীব্রতা বাড়ছে বলেই আবহাওয়ার প্যাটার্ন তথা ধরনের পরিবর্তন এসেছে।
চরম উষ্ণতা
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, গত তিন দশক ধরে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা আগের তিন দশকের চেয়ে তীব্রভাবে বাড়ছে। অর্থাৎ, ১৯৬১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলের তাপমাত্রা তুলনামূলক কম ছিল। কিন্তু ১৯৯১ সালের পর থেকে এটি ক্রমশ বাড়ছেই।
এমনকি গত ত্রিশ বছর ধরে শীতকাল ও বর্ষাকালেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরম পড়ছে।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, আগে বাংলাদেশে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত তাপপ্রবাহ দেখা যেত। কিন্তু গতবছর সেই তাপপ্রবাহ সেপ্টেম্বরে গিয়ে ঠেকেছে।
বাংলাদেশে ২০২৪ সালে গরমকাল দীর্ঘ হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
অনিয়মিত বৃষ্টিপাত
ন্যাপ থেকে জানা যায়, শীতকাল (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) ও বর্ষা পূর্ববর্তী (মার্চ থেকে মে) সময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমছে। কিন্তু বর্ষা (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) ও বর্ষা পরবর্তী (অক্টোবর থেকে নভেম্বর) সময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়ছে।
এসব কারণে, শীতকালে অনেক বেশি শুষ্ক এবং বর্ষাকালে অনেক বেশি ভেজা আবহাওয়া থাকছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোত বাংলাদেশে তীব্র বৃষ্টিপাত হয়েছে। ২০০৪ সালে ঢাকায় ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩৪১ মিলিমিটার, ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় ৪০৮ মিলিমিটার, ২০০৯ সালে ঢাকায় ১২ ঘণ্টায় ৩৩৩ মিলিমিটার, ২০২০ সালে রংপুরে ২৪ ঘন্টায় ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এইসব তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছেই। এর মাঝে রংপুরের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বিগত ৬০ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ ভবিষ্যতে উত্তর-পূর্ব এবং পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাত হবে এবং পশ্চিমাঞ্চলে এই পরিমাণ কমতে থাকবে। কিন্তু ২০৫০ সালে সারাদেশেই বৃষ্টিপাত বাড়বে।
বাংলাদেশে বর্ষাকাল দেরী করে আসছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বাংলাদেশে গত ৩০ বছর ধরে উপকূলবর্তী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতিবছর ৩ দশমিক ৮ থেকে ৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইসিসিসিএডি)-এর তথ্য অনুযায়ী, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলের মানুষের ঘরবাড়ি ও জীবিকা বিপন্ন হওয়ার কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় নয় লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে।
এ কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ১২ থেকে ১৮ শতাংশ ডুবে যাওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ন্যাপে বলা হয়েছে যে প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি নদী ভাঙনের শিকার হয়।
নদ-নদীতে বন্যা
অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে গেলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ প্রায় প্রতিবছরই এমন অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে। এর মাঝে ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪, ২০০৭ ও ২০১৭ সালের বন্যার কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ন্যাপে বলা আছে, এসব বন্যায় দেশের শতশত নদ-নদী প্লাবিত হয়েছিলো এবং হাজার হাজার হেক্টরের ফসল সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি, অনেক পশুপাখি, এমনকি মানুষও মারা গিয়েছিলো।
অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে গেলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
খরা
দীর্ঘ সময় ধরে চলা শুষ্ক আবহাওয়া, অপর্যাপ্ত বৃষ্টি, বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পীভবন ও প্রস্বেদনের পরিমাণ বেশি হলে খরার সৃষ্টি হয়। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় দেখা দেয় পানির অভাব। কুয়া, খাল, বিলের মতো নিত্যব্যবহার্য পানির আধার শুকিয়ে যায়।
১৯৬০ থেকে ১৯৯১ সাল, এই সময়সীমার মাঝে বাংলাদেশ মোট ১৯টি খরার মুখোমুখি হয়েছিলো। এর মাঝে সবচেয়ে তীব্র ছিল ১৯৬১, ১৯৭২, ১৯৭৬, ১৯৭৯ ও ১৯৮৯ সালের খরা।
এরপর ১৯৯৭ সালেও তীব্র খরা দেখা দেয়। সেই খরার কারণে কৃষিতে প্রায় ৫০ কোটি ডলারের ক্ষতি মোকাবেলা করতে হয় বাংলাদেশকে। সেসময় ১০ লাখ টন ধান ক্ষতির শিকার হয়। যার মধ্যে ছয় লাখ টন ছিল রোপা আমন। সব মিলিয়ে কৃষিতে এ ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০ কোটি ডলার।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট অ্যান্ড ডিজাস্টার রিস্ক অ্যাটলাস’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে দেশের প্রায় ২২টি জেলা খরার ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে খুবই উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ছয় জেলা। খরাপ্রবণ এসব এলাকা মূলত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত।
খরাপ্রবণ এসব এলাকা মূলত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত।
নদী ভাঙন
ন্যাপে বলা হয়েছে যে প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি নদী ভাঙনের শিকার হয়।
সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের (সিইজিআইএস) তথ্যের বরাত দিয়ে এখানে বলা হয়েছে যে ১৯৭৩ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যমুনা নদীর ভাঙ্গন ছিল প্রায় ৯৪ হাজার হেক্টর এবং বৃদ্ধি ছিল সাড়ে ১৪ হাজার হেক্টর।
এই সময়ের মাঝে পদ্মায় সাড়ে ৩৩ হাজার হেক্টরের বেশি জমি ভেঙ্গেছে এবং গড়েছে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও কম। এছাড়া, যমুনায়ও ২৫ হাজার ২৯০ হেক্টর জমি বিলীন হয়ে গেছে।
সিইজিআইএস বলছে, গত ২২ বছরে পদ্মা ও যমুনা নদীর ভাঙনে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়েছে।
প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি নদী ভাঙনের শিকার হয়।
আকস্মিক বন্যা
ভারী বা অত্যধিক বৃষ্টিপাতের কারণে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
সাধারণত এপ্রিল থেকে জুলাই এবং সেপ্টেম্বর থেকে অক্টবরে এরকম বন্যা দেখা যায়।
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে উত্তর-পুর্বাঞ্চল সবসময় আকস্মিক বন্যার ঝুঁকিতে থাকে।
এতে করে এই অঞ্চলের কৃষিখাত তীব্র ক্ষতির মুখে পড়ে। অথচ, দেশের ১৮ শতাংশ ধান উৎপাদন হয় এই অঞ্চলে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে বর্ষার আগে ও বর্ষার সময়ে বৃষ্টিপাত বাড়বে, তাই তখন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার পরিমাণ আরও বাড়বে।
ভারী বা অত্যধিক বৃষ্টিপাতের কারণে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
শহরাঞ্চলের বন্যা
বাংলাদেশের শহরাঞ্চলগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে ঘনঘন বন্যা দেখা যাচ্ছে এবং এতে করে পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক উদ্বেগও বাড়ছে।
গত দুই দশকের মাঝে ২০০৪ সালের ঢাকার বন্যা উল্লেখ করার মতো। কারণ ঐসময় ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছিলো।
সেই বন্যায় শহরের ৮০ শতাংশ এলাকার পাঁচ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো।
বাংলাদেশের শহরাঞ্চলগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে ঘনঘন বন্যা দেখা যাচ্ছে এবং এতে করে পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক উদ্বেগও বাড়ছে।
ঘূর্ণিঝড়
দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশের অন্যতম উল্লেখযোগ্য দুর্যোগ হল ঘূর্ণিঝড়।
১৯৬০ থেকে ২০১০ সালে বাংলাদেশে মোট ২১টি ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হয়েছিলো, যেগুলোর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৭ কিলোমিটার থেকে ১১৭ কিলোমিটারেরও বেশি।
এগুলোর মাঝে ৩৩ শতাংশ ঘূর্ণিঝড় বর্ষার আগে হয়েছিলো এবং ৬৭ শতাংশ হয়েছিলো বর্ষা পরবর্তীতে।
যেখানে ১৯৭১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে প্রতি দুই থেকে তিন বছরে একটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত করত, সেখানে ২০২৩ সালে চার চারটি ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগর হয়ে বাংলাদেশের ওপরে প্রভাব ফেলেছে।
“বাতাসের গতিই মূলত ঋতুকে পরিবর্তন করে” – আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ
লবণাক্ততা বৃদ্ধি
বাংলাদেশের ২০ শতাংশ এলাকা হল উপকূলীয় অঞ্চল এবং ৩০ শতাংশের বেশি হল আবাদি জমি।
কিন্তু যেহেতু সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, তাই দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল সমুদ্রগর্ভে বিলীন হলে লবণাক্ততা বেড়ে আরও ভেতরে ঢুকে যাবে। এতে করে ফসলের উৎপাদন কমবে।
ন্যাপ-এর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৩ থেকে ২০০৯ সাল, এই সময়ের মাঝে বাংলাদেশে প্রায় ২৭ শতাংশ লবণাক্ততা বেড়েছে।
১৯৭৩ থেকে ২০০৯ সাল, এই সময়ের মাঝে বাংলাদেশে প্রায় ২৭ শতাংশ লবণাক্ততা বেড়েছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, বছরের প্রতি ঋতুতেই তাপমাত্রা আগের তুলনায় বাড়ছে। বিশেষ করে গত ১০ থেকে ১২ বছর ধরে তাপপ্রবাহের মাত্রা বেড়েই চলেছে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বছরের শুরুতে বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এখন সিজনাল প্যাটার্ন চেঞ্জ হচ্ছে। আগে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে তাপদাহ হতো। কিন্তু ইদানীং সেটা বেড়ে অক্টোবর পর্যন্ত চলছে।”
তিনি বলেন যে ২০২৩ সালের মতো এবছরও তাপপ্রবাহ আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি প্রকট।
“২০২৩ সাল ছিলো উষ্ণতম বছর, গত বছর দীর্ঘ সময় হিটওয়েভ ছিলো। জুন মাসে দুই সপ্তাহ ধরে হিটওয়েভ ছিল। ঐ সময় দেশের কয়েক জায়গায় ৪০ ডিগ্রির ওপরে তাপমাত্রা ছিল। এই ধরনের হিট ওয়েভ কন্ডিশন ২০২৪ সালেও আসার সম্ভাবনা প্রকট।”
মি. রশীদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও নরওয়ের আরও পাঁচজন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞের করা ‘বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল জলবায়ু: আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের প্রবণতা এবং পরিবর্তন’ শীর্ষক জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে ঢাকায় মার্চের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহ থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হলেও ১৯৯৭ সালের পর থেকে এতে ভিন্নতা দেখা গেছে। এখন রংপুর, খুলনা-সহ প্রায় সব বিভাগে বর্ষা মৌসুমেও তাপপ্রবাহ দেখা যাচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে ঢাকায় মার্চের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহ থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হলেও ১৯৯৭ সালের পর থেকে এতে ভিন্নতা এসেছে।
তীব্র শীত
গত ৪৩ বছরে শীতের ক্ষেত্রেও বেশ পরিবর্তন এসেছে। আগে ডিসেম্বরের আগে থেকেই ঢাকায় শীত পড়তো। কিন্তু ২০২৩-২০২৪ সালের শীত মৌসুমে মধ্য ডিসেম্বরেও ঢাকায় শীত অনুভূত হয়নি।
অথচ, মি. রশীদদের গবেষণা অনুযায়ী আগে ঢাকায় জানুয়ারিতে শৈত্যপ্রবাহ হত। কিন্তু ১৯৯০ সালের পর থেকেই জানুয়ারি মাসে ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহের পরিমাণ কমে গেছে। আবার জানুয়ারিতে শৈত্যপ্রবাহ হলেও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্র্র সেলসিয়াসের নীচে নামছে না। অথচ, মানুষের শীত শীত অনুভূতি বেশি হচ্ছে।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালেও খাতায় কলমে তাপমাত্রা খুব একটা নিচে নামেনি। কিন্তু পুরো জানুয়ারি মাস জুড়েই শীতের তীব্র অনুভূতির কথা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছিল মানুষ।
১৯৯০ সালের পর থেকেই জানুয়ারি মাসে ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহের পরিমাণ কমে গেছে।
বজ্রপাত
বাংলাদেশে প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত বজ্রপাতের প্রকোপ থাকে বেশি।
বজ্রপাতের মাত্রা এবং মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনা করে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার এটিকে বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলেন, বজ্রপাতের সময়সীমা সাধারণত ৩০-৪৫ মিনিটি পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সেজন্য ঘন কালো মেঘ দেখা দিলে ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
ন্যাপের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিন হাজারেরও বেশি মানুষ বজ্রপাতে মারা গেছে এবং আহত হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। এদের মাঝে বেশিরভাগই পুরুষ।
বজ্রপাতে মৃত্যু ঘটে সবচেয়ে বেশি ঘটে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু এলাকায়।
বাংলাদেশে প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত বজ্রপাতের প্রকোপ থাকে বেশি।
জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়া অনুযায়ী, আভিকর্ষিক প্রভাবে অপেক্ষাকৃত শুকনা ভূখন্ড, শিলা বা উভয়ের প্রত্যক্ষভাবে নিম্নমুখী অবনমন বা পতন হল ভূমিধস।
ভূমিধস হল ভূমিক্ষয়ের একটা বড় কারণ এবং জানামতে সবচেয়ে শক্তিশালী অবক্ষয়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি এলাকায় এটা বেশি ঘটে থাকে।
গত কয়েক বছর ধরে প্রায় প্রতিবছরই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিধস হতে শোনা যাচ্ছে। এমনকি, সিলেট বিভাগেও বন্যার মাঝে ভারী বৃষ্টিতে ভূমিধস ও ভূমিধসের কারণে মৃত্যু ঘটছে।
বাংলাদেশের অন্যতম বড় মাত্রার ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে ২০০৭ সালে। ওই বছরের ১১ই জুন চট্টগ্রামে বৃষ্টিজনিত ভূমিধ্বসে অন্তত ১২২ জনের প্রাণহানি ঘটে।
প্রবল বর্ষণের ফলে সেদিন পাহাড় থেকে মাটি ও কাদার ঢল পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত বস্তি ও কাঁচা ঘরবাড়ি উপরে ধ্বসে পড়লে বহু মানুষ চাপা পড়ে যায় এবং অনেকে নিখোঁজ হয়।
ন্যাপ-এর তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে বর্ষাকালীন ও বর্ষা-পরবর্তী বৃষ্টিপাত বাড়বে এবং তখন পাহাড়ি এলাকায় শতকরা পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ হারে ভূমিধস বাড়বে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি ও অম্লতা
জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান-ন্যাপ) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অতীতের রেকর্ডগুলো বলছে যে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে।
বাংলাদেশ উপকূলের কাছাকাছি এলাকায় প্রতিবছর বর্ষাকালের আগে শূন্য দশমিক শূন্য এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তবে বর্ষাকালে সেই তাপমাত্রা থাকে শূন্য দশমিক শূন্য ৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তবে শীতকালে সেটি কমে শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য চার ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় এবং বর্ষা পরবর্তী সময়ে সেটি হয় শূন্য দশমিক শূন্য ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বলা হচ্ছে, নিকটবর্তী সময়ে সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। এবং, এরপর এটি বাড়তে বাড়তে এক থেকে এক দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে। শুধু তাই না, বঙ্গোপসাগরের অম্লতার মাত্রাও প্রতিবছর একটু একটু করে বাড়তে পারে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি ও অম্লতা বৃদ্ধির ক্ষতিকর প্রভাব আছে। এর ফলে সমুদ্রের ইকো-সিস্টেমের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে এবং সামুদ্রিক বিভিন্ন মাছের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন স্বল্পতাও তৈরি করতে পারে।

 

বিবিসি বাংলা

এ সম্পর্কিত আরো খবর

উপদেষ্টা মন্ডলীঃ

ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম

সম্পাদক মন্ডলীঃ

মোঃ শহীদুল্লাহ রাসেল

প্রধান নির্বাহীঃ

মোঃ রফিকুল্লাহ রিপন

সতর্কীকরণঃ

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি
অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও
প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
সকল স্বত্ব
www.jagonarayanganj24.com
কর্তৃক সংরক্ষিত
Copyright © 2024

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ

বনানী সিনেমা হল মার্কেট
পঞ্চবটী ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ
ফোন নম্বরঃ ০১৯২১৩৮৮৭৯১, ০১৯৭৬৫৪১৩১৮
ইমেইলঃ jagonarayanganj24@gmail.com

Website Design & Developed By
MD Fahim Haque
<Power Coder/>
www.mdfahim.com
Web Solution – Since 2009

error: Content is protected !!