সেই টিটুর হাতে ছিল ভারী অস্ত্র, জনৈক সাংবাদিকের হাতে দুই অস্ত্র, ভিকির কাঁধে অত্যাধুনিক মরণাস্ত্র
ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো নগরবাসীর মাঝে গুঞ্জন রয়েছে ‘কি ঘটেছিলো ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে।’ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিলো মারাত্মক অবস্থানে । নারায়ণগঞ্জসহ সর্বত্র ছিল উত্তপ্ত উত্তেজনা ।
আন্দোলনকারীদের দমাতে বেগ পেতে হচ্ছিল পুলিশকে। বলা চলে আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পুলিশ একরকম কোণঠাসা হয়ে পিছু হটেন। এমন পরিস্থিতিতে অন্তত শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারিদের দমাতে মাঠে নামেন গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমান। তার সঙ্গে ছিলেন শ্যালক তানভির আহম্মেদ টিটু, বেয়াই ফয়েজউদ্দিন লাভলুসহ অসংখ্য লোক। এদিন তারা ডিআইটি এলাকায় এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়েন। ৬ বছরের রিয়া গোপসহ নিহত হয়েছিল দুজন।
ঠিক নগরীর ২নং রেল গেইট (উত্তরাঞ্চল থেকে) এলাকায় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান তার শ্যালক বিয়াই ও চেলাচেমুন্ডাদের নিয়ে ফিল্মী স্টাইলে অ্যাকশন শুরু করে।
নগরীর কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কেথা বলে জানা যায় জানায়, নারায়ণগঞ্জে আগে পরে অনেক অস্ত্রই দেখা গিয়েছিল। তবে, সেদিন তাদের হাতে যে পরিমাণ অস্ত্র ছিল এতসংখ্যক অস্ত্র আগে তারা কখনই দেখেনি। তাদের ভাষ্যমতে, টিটুসহ কয়েক জনের হাতে ছিল অত্যাধুনিক ভারী অস্ত্র। যা সাধারণ মানুষের কাছে থাকার কথা না। সেই অস্ত্রের একটি ছিল শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহম্মেদ টিটুর কাছে। তিনি সেটি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন সেদিন। অনেকটা ফিল্মি কায়দায় টিটু ছাত্র-জনতার দিকে গুলি বর্ষণ করেন। এছাড়াও এদিন শামীম ওসমানের পিছনের সারীতে ছিলেন তারই বেয়াই ফয়েজউদ্দিন লাভলু। পিস্তল হাতে তাকেও গুলি ছুড়তে দেখা যায় সেদিন। এছাড়া শামীম ওসমানের সঙ্গে সঙ্গেই ছিলেন একজন সাংবাদিক। তার ডান হাতে একটি ছোট এবং ডান হাতে ছিল একটি বড় আগ্নেয়াস্ত্র। একই বহরে ছিলেন ডিশ বাবু। তাকেও গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। এছাড়াও মাথায় চুল কম, ফর্সা একজনকে দেখা যায়। অনেকের দাবি তিনিও একজন সাংবাদিক। তার কাঁধে কালো রঙের একটি ব্যাঙ ছিল। তবে তাকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়নি। তিনি শামীম ওসমানের পাশাপাশিই হাঁটছিলেন। ওইদিন মুহুর্মুহু গুলিবর্ষনের সময় একজনকে পাঞ্জাবী ও টুপি মাথায় মধ্যবয়সী একজন যুবককে দেখা গেছে কখনো দৌড়াচ্ছে আবার কখনো হাটছে অ্যাকশন নিয়ে। তার বিষয়েও রয়েছে নানা গুঞ্জন।
এ ছাড়াও ওইদিন অত্যাধুনিক একটি ভারী অস্ত্র দেখা গিয়েছিল ফয়েজউদ্দিন লাভলুর ছেলে ভিকির কাঁধে। ধারণা করা হয়, সেই অস্ত্রটি ছিল এতটাই ভয়াবহ। এমন অস্ত্র সচারচর যুদ্ধ ক্ষেত্র ছাড়া দেখা যায় না। এছাড়াও একই বহরে অস্ত্র হাতে ছাত্র-জনতার উপর গুলি করতে দেখা যায় আহম্মেদ কাউসারকে। এছাড়াও অসংখ্য মানুষ ছিলেন তাদের সঙ্গে। কারো হাতে পিস্তল, কারো হাতে লাঠি সোটা আবার কারো সঙ্গে ছিল দেশীয় অস্ত্র।
এদিকে সেদিনের অমন ঘটনাকে সাধারণ মানুষ ন্যাক্কারজনক বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন, এমন ঘৃণিত ঘটনা ইতোপূর্বে নারায়ণগঞ্জে দেখা যায়নি। সেদিন শহরে ৬ বছরের শিশু রিয়াসহ দুজন তাদের গুলিতে নিহত হয়েছিল। এদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ বিচার দাবি করেছেন সাধারণ মানুষ।
এমন লোমহর্ষক ঘটনায় কোন কোন গণমাধ্যমকর্মীরা ভিডিও অথবা ছবি তুলতে গিয়ে নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর ওই লোমহর্ষক গুলিবর্ষনের ঘটনা ও অস্ত্র নিয়ে মহড়ার সময় পৃথক পৃথক স্থানে বিশেষ পেশার নামধারীদের ভূমিকা ছিলো মারাত্মক। হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন নামধারীদের আটক করলেই জানা যাবে ওই অসংখ্য অস্ত্রের উৎসসহ সকল তথ্য।
সুত্র: নারায়ণগঞ্জ আপডেট নিউজ