সেনাবাহিনীর অভিযান চান স্থানীয়রা
ষ্টাফ রিপোর্টার:
ফতুল্লা থানাধীন প্রতিটি পাড়া-মহল্লা যেন এখন মাদকের অভয়ারন্যে পরিনত হয়েছে। পুলিশের নিরবতা আর রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং বিশেষ পেশার কর্তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে দিন দিন যেন আরও ভয়াবহ রুপ ধারন করছে। যার ফলে তৈরী হচ্ছে কিশ্যোরগ্যাং এবং মাদকের নিয়ন্ত্রন ও ভাগভাটোয়ারা নিয়ে হত্যাকান্ডের মত জঘন্যতম ঘটনারও জন্ম দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। গত শনিবার ফতুল্লা থানাধীন নরসিংপুরে স্বপন নামে একজনকে হত্যা এবং তার ভাই বাবুকেও আহতের ঘটনা ঘটেছে। সেই ঘটনার মহানায়ক মাসদাইর গুদারাঘাট এলাকার চিহিৃত মাদক স¤্রাট দিপুকে কিন্তু গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকার পতন হলেও তার দোসরদের পতন হয়নিবরং ঐ সকল আওয়ামীলীগের দোসর বা তাদের কর্মী সমর্থকরা খোলস পাল্টে বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে সাথে নিয়েই বীরদর্পে মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছে। আর এই সকল মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগীতা করছে স্থানীয় কতিপয় কিছু সংবাদমাধ্যম কর্মী ও কিছু বিএনপি নেতা কর্মীরা এমনটাই দাবী বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সর্বস্তরের সাধারন মানুষের।
নারায়নগঞ্জের সদর উপজেলা ফতুল্লা থানাধীন প্রতিটি পাড়া-মহল্লাতে এখন হাত বাড়ালেই মিলছে হরেক রকমের মাদকদ্রব্য। রাস্তার উপর দাড়িয়ে প্রকাশ্যেই বিক্রি করা হচ্ছে মাদক। আর শান্তিকামী নিরীহ মানুষগুলো চোখ থাকতেও কানার ভুমিকা পালন করতে হচ্ছে পরিবার-পরিজনের কথা ভেবে। ফতুল্লার মাসদাইরসহ আশপাশ এলাকা,পাগলার কুতুবপুর,আলীগঞ্জ,ইসদাইর বাজার ও রেললাইন,চানমারী নতুন সড়ক,এনায়েতনগরের ধর্মগঞ্জ,মুসলিমনগর,নরসিংপুর, দাপা ইদ্রাকপুর, দাপা মসজিদ, খোজপাড়া, ফতুল্লা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন, ফতুল্লা রেলস্টেশন, ব্যাংক কলোনী এলাকায় মাদকের অভয়রান্যে পরিনত হয়েছে।
প্রতিটি অলি-গলিতে অনেকটা প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে মরণঘাতী হিরোইন, ইয়াবা, গাঁজা। পুলিশের দুর্বল অভিযানের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদীন পলাতক থাকা মাদক ব্যবসায়ীরা ও ফিরতে শুরু করেছে এলাকায়।
৫ই আগষ্টের ছাত্র জনতা আন্দোলনে স্বেরাচারী সরকারের পতনে সাধারন মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন না হলেও ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে মাদক ব্যবসায়ী,কিছু অর্থলোভী পুলিশ ও নামধারী কিছু বিশেষ পেশার মানুষের।
৫ই আগষ্টের পর থেকে সারাদেশের ন্যায় অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ প্রশাসন। পুলিশের দুর্বল অভিযানের সুযোগে ফতুল্লার উল্লেখিত এলাকার মাদকের ডিলাররা লাখ লাখ টাকার মাদক এলাকায় প্রতিদিন সরবরাহ করেছে। পাইকারী ও খুঁচরা মাদক বিক্রি করা হচ্ছে, ডিলারদের নিয়োগকৃত খুচরা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। এমনকি মাদকের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে।
অপরদিকে, মাদকের ভয়াল থাবায় আকৃষ্ট হয়ে ধ্বংসের পথে ধাবিত হচ্ছে স্থানীয় এলাকার যুব সমাজ। এমনকি মাদকের অর্থ সংগ্রহে এলাকায় সংগঠিত হচ্ছে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মত জঘন্য ঘটনা। আর মাদক বিক্রির টাকার অত্যাধুনিক অস্ত্র ক্রয় করছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। মূলত, এলাকার আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি অবনতির অন্যতম কারন হচ্ছে মাদক।
সূত্রমতে, গাঁজার ডিলার যুবলীগ লীগ কমী মৃত শাহজাহান আলীর ছেলে শেরু বাবু, মৃত রশিদ হাওলাদারের ছেলে ডাকাত দ্বীন ইসলাম ও তার দুই বোবা ভাই, দাপা আদশ স্কুলের সামনে ভাগিনা শাওন, বিএনপি নেতা লাল মামুনের ছোট ভাই তপু, সালামের ছেলে শাহিনের ইয়াবার ব্যবসা জমে উঠেছে।
ফতুল্লা রেলস্টেশন এলাকায় রহমানের ছেলে মাদক সম্রাট বিএনপি নেতা টুটুলের ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করে তার সেলসম্যান আলাউদ্দিনের ছেলে জাবেদ, জানে আলমের ছেলে হৃদয়, আসলাম, চোরা সুমন। মৃত ডাকাত লিপুর স্ত্রী পারভীনের চলছে জমজমাট হেরোইনের ব্যবসা। সুমনের স্ত্রী আল্পনার গাঁজার ব্যবসা এখন রমরমা, হান্ড্রেড বাবুর হেরোইনের ব্যবসা।
ফতুল্লা পাইলট স্কুল এলাকায় ফারুকের ইয়াবার ব্যবসা, ভাগিনা আল-আমিন ও রনির ইয়াবার ব্যবসা এখন তুঙ্গে।
খোজ পাড়া এলাকায় হেরোইনের ব্যবসা চলে টিকি মরা লিটন, ইয়াবার ব্যবসা আজগরের ছেলে যুবলীগ কমী হাসানের মাধ্যমে।
দাপা মসজিদ এলাকায় ইয়াবার ব্যবসা যুবলীগ ক্যাডার ডাকাত শহিদ হোসেনের মেয়ে শরমী, তার ভাই শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ এর সাংগঠনিক সম্পাদক আসিফ, হেরোইনের ব্যবসা, রিপন কাজির ছেলে মিলন কাজি, তার বোন সোনিয়া, আব্দুর রব ড্রাইভারের ছেলে রাব্বির ইয়াবার ব্যবসা, বিএনপি নেতা দিপুর ভাই রবিনের ইয়াবার ব্যবসা।
কুতুবপুর এলাকায় কিলার আক্তার ও মিঠুনের মাধ্যমে লেংড়া লিখন,সানজিল,জাকির ওরফে জাকির ড্রাইভার,আলামিন,সুমন দাস,রাজু,আসাদ ও জয় গং। মাসদাইর বাজার ও আশপাশ এলাকায় কসাই নাসিরের ছেলে সেলিম ও রাসেল,পোড়া কাকন, গুদারাঘাট এলাকায় জাহিদ,দিপু,লেচুবাগ এলাকায় মামুন ওরফে গোটা মামুন অন্যতম। এদের মাধ্যমে উক্ত এলাকাগুলো মাদকের অবয়ারন্যে পরিনত হয়েছে। নরসিংপুর এলাকায় সানির মাদক স্পটটি পুরো জেলাজুড়েই যেন আলোচিত একটি স্পট। দুরদুরান্ত থেকেই মাদক সেবীরা এখানে ছুটে আসেন মাদক নিতে।
এ সকল এলাকায় বসবাসকারীদের মতে, পুলিশের নিরবতা ভুমিকা যেন মাদক বিক্রেতাদেরকে আরও বেশী উৎসাহিত করে তুলেছে মাদক ব্যবসায়। অনেক সময় থানা পুলিশ কিংবা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কিছু কর্তারা এখানে আসেন। তবে গ্রেফতার করতে নয় আসেন মাসোহারা নিতে আসেন। এছাড়া দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে এ সকল মাদক বিক্রেতাদের উঠা-বসা এবং বিশেষ পেশার ব্যক্তিদের সাথে সখ্যতা যেন শক্তি ও সাহস যোগাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীদেরকে।
স্থানীয় যুব সমাজকে রক্ষাসহ মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে দ্রুত সময়ের মধ্যে এইসকল মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার দাবি করেছেন এলাকাবাসী। অন্যথায়, মাদকের ছোবলে আক্রান্ত হয়ে অনিশ্চিত পথে ধাবিত হয়ে পড়বে যুব সমাজ। এলাকার শান্তি বজায় রাখাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উল্লেখিত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে সোনবাহিনী,র্যাব ও জেলা পুলিশের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।