রূপগঞ্জের ঢাকা সিলেট মহাসড়কে কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে চালক ও হেলপারকে জিম্মি করে ছিনতাই হওয়া ট্রাকসহ মালামাল উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ছিনতাইয়ে জড়িত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ৬ মে রাতে রূপগঞ্জের বরাবো ও বন্দর উপজেলার মদনপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাই হওয়া এসব মালামাল উদ্ধার করা হয়।
এরপূর্বে সোমবার (৫ মে) বিকেলে রূপগঞ্জে ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের ভুলতা উড়াল সেতুর ওপরে এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায় অপরাধী চক্র।
কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ছিনতাইয়ের কাজে জড়িত গ্রেপ্তারকৃতরা হলো : রূপগঞ্জের রূপসী স্লুইস গেইট এলাকার আফসার উদ্দিনের ছেলে বাতেন দেওয়ান, একই উপজেলার আটিপাড়া এলাকার করম আলীর ছেলে মকবুল হোসেন ও বরিশালের হিজলা ধানাধীন ধুল খোলা এলাকার শহিদ জমাদ্দারের ছেলে আনোয়ার হোসেন।
এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক জাকির হোসেন জানান, ৫ মে সোমবার বিকেলে প্রায় ১৪ হাজার লিটার পাম অয়েল (সয়াবিন তেল) নিয়ে একটি ট্রাক হবিগঞ্জের চৌধুরী বাজারে ‘মেসার্স রাধা বিনোদ মোদক’ নামক প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
পাম ওয়েল (সোয়াবিন তেল) ভর্তি ট্রাকটি ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের ভুলতা উড়াল ওপরে পৌঁছলে একটি সাদা প্রাইভেট কার ট্রাকটির গতিরোধ করে বাতেন দেওয়ান, আনোয়ার ও মকবুল।
প্রাইভেটকারে থাকা বাতেন দেওয়ান, মকবুল ও আনোয়ার নিজেদের কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ে ট্রাকে থাকার মালামালের কাগজপত্র দেখাতে বলেন। ট্রাকচালক মন্নান ও হেলপার স্বপনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তেল বোঝাই ট্রাকটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
সয়াবিন তেল ভর্তি ৭৫ ড্রাম ট্রাক ছিনতাইয়ের ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে ট্রাকচালক মান্নান বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ মঙ্গলবার রাতে রূপগঞ্জে বরাবো ও নারায়ণগঞ্জে মদনপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাই হওয়া ৭৫ ড্রাম তেলের মধ্যে ৬০ ড্রাম তেলসহ ট্রাকটি উদ্ধার করে।
কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় এমন ট্রাকভর্তি সোয়াবিন তেল ছিনতাইয়ের কর্মকান্ডে জড়িত মকবুল হোসেন, বাতেন দেওয়ান ও আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয় পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তার ও ছিনতাই হওযা বাকি মালামাল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান উপপরিদর্শক জাকির হোসেন।
উল্লেখ্য, ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম মন্ত্রী কারাগারে বন্দি গাজী গোলাম দস্তগীরের অন্যতম দোসর এবং আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ দের যুগ যাবৎ রূপসীর আফসার উদ্দিনের পুত্র দেওয়ান মাহমুদ সিটি মিল ফ্যাক্টরীতে নানাভাকে ঠিকাদারির নামে ভূমিদস্যুতা এবং এমন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়ে আংগুল ফুলে কলাগাছ বনে যায়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতন হলে অনেকেই ভোল পাল্টে বিএনপির লেবাসধারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটাতে চেষ্টা অব্যাহত রাখে। এমন লেবাসে ২৫ মার্চ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন এবং সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ডা. মো. শাহীন মিয়াকে আহবায়ক, মো. আলম মিয়াকে সদস্য সচিব এবং সেই মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীরের অত্যান্ত ঘনিষ্ঠ সহচর আফসার উদ্দিনের পুত্র দেওয়ান মাহমুদকে সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক করে ৭৯ সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটির অনুমোদন দেয়। এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক তোলপাড়, আন্দোলন, মানববন্ধন ও সাংবাদিক সম্মেলন করে অনেকেই।
সেই দেওয়ান মাহমুদের আপন ভাই দেওয়ান মোহাম্মদ বাতেন কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ৭৫ ড্রামভর্তি সয়াবিন তেল ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার হলে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ধামাচাপা দিতে পুলিশ কে মোটা অংকের টাকায় মামলার বাদীকে ম্যানেজ করে মামলা প্রত্যাহার এবং মামলার জটিলতা রক্ষা পেতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে দেওয়ান মাহমুদ।