মাইনুল ইসলাম রাজু আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
আমতলীতে সপ্তাহ জুরে ঘন কুয়াশার কারনে ঘড়ে যাচ্ছে পান পাতা। বহু কষ্টে ধার দেনা এবং এনজিও ঋণ নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বরজ করার পর শীত শৌসুমের শুরুতেই চোখের সাসনে ঘামে শ্রমে ফলানো পান পাতা এভাবে ঝড়ে যাওয়ায় পান চাষীদের সর্বনাশ হয়েছে।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নে ১৩৩ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী চাষ হয়ে থাকে গুলিশাখালী, চাওড়া, আঠারগাছিয় ও আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে। শীত মৌসুমের শুরুতে ঘন কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহ না থাকলেও গত দশ দিন ধরে শৈত্য প্রবাহ এবং ঘন কুয়াশার কারনে বরজের পান পাতা লাল হয়ে ঝড়ে যাচ্ছে। শৈত্য প্রবাহ এবং কুয়াশার হাত থেকে পান চাষীরা তাদেও রক্ষার জন্য পুরো বরজ পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়ার পরও শেষ রক্ষ হচ্ছে না। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে এক এক জন পান চাষী বরজ তৈরী করেছেন। নিজেদের চোখের সামনে এভাবে বহু ঘামে শ্রমে তৈরী করা তাদের পানের বরজের পাতা চোখের সামনে লাল হয়ে ঝড়ে যেতে দেখায় অনেক চাষীই কান্নায় ভেঙ্গে পরেন।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকালে উপজেলার গুলিশাখালীর গোছখালী, ডালাচারা, চাওড়া ইউনিয়নের পাতাকাটা, ঘটখালী, উত্তর ঘটখালী, আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের তারিকাটা, ঘোপখালীসহ বিভিন্ন গ্রাম সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে পান বরজের বিবর্ন চিত্র। বরজের সাথে পানের লতা দাড়িয়ে থাকলেও ঠান্ডায় পান পাতা শুকিয়ে লাল হয়ে ঝড়ে মাটিতে পড়ে আছে। গুলিশাখালী গ্রামের গোছখালী গ্রামের পান চাসী কপিল মাঝি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন ভাই ধার দেন কইর্যা ১০ লক্ষ টাকা করে ৭০ শতাংশ জমিতে পান চাষ করেছি। দ্যাখেন আমার বরজের কি অবস্থা হয়েছে। শীত আর কুয়াশায় বরজের সব পান পাতা লাল হয়ে ঘুকিয়ে ঘড়ে পড়েছে। বছর শেষে আমি ২ লক্ষ টাকাও ঘরে তুলতে পারবো না। গুলিশাখালী গ্রামের নজরুল প্যাদা বলেন, এনজিওডে গোনে টাহা লইয়া ৫লক্ষ টাহা খরচ কইর্যা ৪০ শতাংশ জমিতে পান চাষ করছি। শীত আর কুয়াশায় সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে। পাতা সব ঝইর্যা নষ্ঠ অইয়া গ্যাছে। এহন এনজিওর টাহা দিমু ক্যামনে হেই চিন্তায় আছি।
ঘটখালী গ্রামের পান চাষী আক্কাচ হাওলাদার বলেন, রিমালে সময় বইন্যায় বর ভাইঙ্গ সব শ্যাষ অইয়া গেছিল। ধার দেন আর এনজিওডে গোনে টাহা আইন্যা আবার বর ঠিক হরছি। এহন শীত কুয়াশা আর বাতাসে সব পান পাতা নষ্ট অইয়া যাওয়ায় মোগো অইছে সর্বনাশ। এহন পোলা মাইয়া লইয়া কি খামু আর কি দিয়া এনজিওর কিস্তি দিমু এহন আছি হেই চিন্তায়। এভাবে শত শত পান চাষী এবছর চলতি শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশা আর শীতের কারনে বরজের পানের ক্ষতি হওয়ায় সর্ব শান্ত হয়ে পরেছে। পানের বরজের পান নষ্ট হওয়ায় তার প্রভাব পরেছে বাজারেও। বুধবার আমতলী শহরের পান বাজার ঘুরে দেখা গেছে এক চল্লি (৩৬টি পান) বড় সাইজের বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়। ছোট সাইজের এক চল্লি পান ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক ক্রেতাও এখন হিসাব করে পান কিনছেন। খুরিয়ার কেয়াঘাট এলাকার নারী পান ক্রেতা ছফুরা বেগম বলেন, পানের দাম দুই তিন গুন বাইর্যা গ্যাছে। যেই পান ১ মাস আগে ২০ টাহায় কেনতাম এহন হেই পান ৫০-৬০ টাহায় কিনি। এহন আর আগের মত পানি কিনি না। খাওয়াও কমাইয়া দিছি।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মাকর্তা মো. ইছা বলেন, ঘন কুয়াশা, অতিরিক্ত শীত এবং আবহাওয়া মেঘলা থাকার কারনে পান গাছে ছত্রাকের আক্রমন দেখা দেয়। এরকম হলে স্বল্প মাত্রায় জৈব বালাই নাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। এছাড়া শৈত্য প্রবাহের হাত থেকে বরজ রক্ষার জন্য পলিথিন টানিয়ে বেড়া দেয়া হলে ছত্রাকের আক্রমন কম হবে।