Views: 7
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ আজ রোববার সন্ধ্যা বা মধ্যরাতের দিকে মোংলার কাছ দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং এসব এলাকার দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
রোববার দুপুরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ ১১ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (২৪ ঘণ্টায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৯৮৯ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধ্বস হতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।
উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থানরত প্রবল এ ঘূর্ণিঝড় রোববার সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আজ সন্ধ্যা বা মধ্যরাত নাগাদ মোংলার কাছ দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকৃলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং কাছাকাছি দ্বীপ ও নদীর চরগুলো ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং কাছাকাছি দ্বীপ ও চরগুলো ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরগুলোকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হলো।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে আঘাত হানা সর্বশেষ সুপার সাইক্লোন ছিল ২০০৭ সালের ‘সিডর’। এটির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৩ কিলোমিটার। তখন ১৫-২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল। রিমালের গতিবেগ সম্পর্কে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, রিমাল এতটা শক্তিশালী নয়, এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়। আর প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সময় সাধারণত তিন থেকে সাত ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়।
সারাদেশে ভারী বৃষ্টির বার্তা: ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উপকূলের জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে। সাগর রয়েছে উত্তাল। আবহাওয়াবিদ আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সারাদেশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ২৪ ঘণ্টায় ৩০০ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রাম, বরিশাল ও নোয়াখালীতে বৃষ্টি হবে বেশি। চট্টগ্রাম বা কক্সবাজার অঞ্চলে এ ধরনের বৃষ্টি হলে পাহাড়ধসের ঝুঁকি থাকবে।
বিশ্বের বিভিন্ন আবহাওয়া মডেলের বরাত দিয়ে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল তার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে বাংলাদেশের উপকূলের ছয় জেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার উপকূলীয় এলাকায় আঘাত করতে পারে। রিমাল খুবই ধীরগতিতে বাংলাদেশ অতিক্রম করবে। ঘূর্ণিঝড়টির কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণায়মান মেঘমালা মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাংলাদেশের ওপরে থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে দেশজুড়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।