জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ব্ল্যাকমেইল করে আমাদের নির্বাচনে আনা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের আমলে আমরা যেসব নির্বাচনে অংশ নেই, সেগুলো স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না। শেখ হাসিনা গায়ের জোরে আমাদের নির্বাচনে এনেছিল।
আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন এসব কথা বলেন জি এম কাদের। এ সময় উপস্থিতি ছিলেন জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল করিম, শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও স্ত্রী শেরিফা কাদের প্রমুখ।
জি এম কাদের বলেন, আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম। নামাজ পড়ে দোয়া করেছি ছাত্রদের জন্য। কিন্তু বিএনপি আন্দোলন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র করেছে।
তিনি বলেন, আমরা সুশাসন দিয়েছিলাম। দখলদারিত্ব করিনি। উন্নয়ন, সংস্কার করেছি। এর ফলে এরশাদ বডিগার্ড নিয়ে চলতেন না।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সঠিক বিচার পাচ্ছি না। বারংবার কবর দেওয়ার পরও আমরা উঠে এসেছি। জনগণের মনে আমাদের যে স্থান আছে, তা কেউ নষ্ট করতে পারবে না। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও প্রটেকশন আমরা পাই না। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাদের অপরাধী করা হচ্ছে। দেশের জনগণের সঙ্গে আমরা থাকবো। জাতীয় পার্টি এগিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, যারা এখনো পানিতেই নামেনি, তারা এখন আমাদের বিরুদ্ধে নানা কথা বলছে। তাদের ধারণা, জাতীয় পার্টির ধ্বংস হলে তাদের ভোটগুলো আমরা পাব। পলিটিক্সে তাদের ম্যাচুরিটি আসেনি, যারা এ কথা বলে।
এর আগে গতকাল বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতা’ ব্যানারে একদল লোক মিছিল নিয়ে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যায়। এ সময় সেখানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে আগুন দেওয়া হয়। তবে দুই পক্ষই দাবি করেছে, তাদের ওপর আগে হামলা হয়েছে।
ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মশাল মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। সেই মিছিলটি শাহবাগ হয়ে বিজয়নগরে যায়। সন্ধ্যা ছয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক অপতৎপরতা ও দেশবিরোধী চক্রান্তের’ প্রতিবাদে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র শ্রমিক জনতা’র ব্যানারে শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিল বের করেন। জাতীয় পার্টির কার্যালয় ঘেরাও করতে বিজয়নগরে যান মিছিলকারীরা। সেখানে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি অবস্থানের ফলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফেসবুকে একটি পোস্টে বলেন, ‘জাতীয় বেইমান এই জাতীয় পার্টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিজয়নগরে আমাদের ভাইদের পিটিয়েছে, অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এবার এই জাতীয় বেইমানদের উৎখাত নিশ্চিত।’ এর কিছুক্ষণ পর হাসনাত আবদুল্লাহ আরেকটি পোস্টে লেখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে রাত সাড়ে আটটায় মিছিল নিয়ে তারা বিজয়নগরে যাবেন। ‘জাতীয় বেইমানদের’ নিশ্চিহ্ন করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সারজিস আলম সাড়ে সাতটার দিকে একই রকম একটি পোস্ট দেন। তিনি লিখেছেন, ‘রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে আমরা বিজয়নগরে যাচ্ছি।’ রাত সোয়া ৮টার পরে গিয়ে দেখা যায়, জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের নিচতলায় আগুন দেওয়া হয়েছিল। তবে তা নিভিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তখনো ভাঙচুর চলছিল।
ছবি- সংগৃহিত